আমাদের লেখা পাঠান careofsahitya@gmail.com-এ। ভালো থাকুন সকলে। চলতে থাকুক কলম। বলতে থাকুক শব্দ।

প্রচ্ছদ

A SAHITYA-ADDA Initiative C/O:sahitya A BLOG MAGAZIN STAY WITH US THANK YOU
bloggerblogger

বুধবার, ১৮ জুন, ২০১৪

সম্পাদকীয়ঃ আষাঢ়, ১৪২১

আষাঢ়, ১৪২১                                                                                                                                                 প্রচ্ছদঃ সৈকত মান্না

             মাঠে নামার আগে ১৯ বছরের তরুন একবার আঙ্গুল ছুঁইয়ে নিল সবুজে, সামনে ইতিহাস অপেক্ষা করছে ওর জন্য। ওদিকে সুদূর ইতালিতে ভাই বোন জমিয়ে বসেছে টিভির সামনে, বাবা বলে গেছে প্রথম গোলটা ওদের নামেই আসবে। ৩৫ বছরের ডিফেন্ডারটা যন্ত্রণায় ছটফট করছে সাইডলাইনে, এ জীবনের মত শেষ হয়ে গেল ওর বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন। এই শতাব্দীর বিস্ময় বালকরা এবার দৌড়াচ্ছে, কেউ সবুজ, কেউ নীল, কেউ সাদা, কেউ কমলা... একটা দুটো তিনটে বিপক্ষকে পিছনে ফেলে কি নিখুত দক্ষতায় বাঁ পায়ের ভয়ঙ্কর শট...  কয়েকশো ক্যামেরা অপেক্ষা করছে ঝলসে ওঠার জন্য, সারা বিশ্ব মুঠো পাকিয়ে আছে আকাশে ছোড়ার আগে, সারা স্টেডিয়াম মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে আছে ফেটে পড়ার প্রস্তুতিতে... হাওয়ায় বাঁক নিচ্ছে বাজুকা... একটা নিশ্চিত লক্ষ্যে... বিশ্বের প্রতিটা খবরের কাগজ অপেক্ষা করছে কালকের হেডলাইনের...শেষে অবিশ্বাস্য সেভ করে উঠে দাঁড়ালো মেক্সিকোর গোলকিপার। 

কি আশ্চর্যের একটা রূপকথা তাই না? এটা কি গ্রিসের অন্ধকবি হোমারের “ওডিসি” কিংবা আধুনিক জে কে রাওলিং-এর “হ্যারি পটার” সিরিজের থেকে কোন অংশে কম বিস্ময়কর বা কম রোমাঞ্চকর। নিঃসন্দেহে না। সেই ১৯৩০-এর উরুগুয়ে থেকে ২০১৪-এর ব্রাজিল, দীর্ঘ ৮৪ বছরের রূপকথা। যার গল্প এখনও কান পাতলে শোনা যায়। বহু বছর আগে বাবার পাশে শুয়ে ১৯৮৬’র আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জেতার গল্প শুনতে শুনতে ঘুমাতে যাওয়া। স্বপ্নের মধ্যে মারাদোনার আর এক স্বপ্নের দৌড়। সেই গল্পের রেশ মনে রেখে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ দেখতে বসা। ১৯৯৮ । জিদানে ভুগছেন আপনিও। একটা অনন্ত রূপকথা, প্রতি চার বছর অন্তর বিনামূল্যে মাস খানেকের জন্য কিনে নেয় সব বিনোদনের স্বতঃ। আমার আপনার মত বই পাগল বাঙ্গালীও পালিয়ে বাঁচতে পারে না। পাড়ার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে কলেজ ক্যান্টিন, খেলার মাঠ থেকে মহাকরণের অন্দরমহল পর্যন্ত পৌঁছে যায় একটা হাওয়ার বেলুনের চর্চা। ভালো, খারাপ সবাই বাবু হয়ে বসে পড়ি ভেসে যেতে। কোন সুদূর দেশের কালো কুঁচকুঁচে ছেলেটা যখন জালে বল জড়িয়ে এসে চিৎকার করে কর্নার ফ্ল্যাগের কাছে, আমরা দেখতে পাই ওর দীর্ঘ চার বছরের তিল তিল করে গড়ে তোলা দুর্গের ইতিহাস চিকচিক করছে চোখের কোণে, তখন ফর্সা অফিসবাবুদের খুব ইচ্ছে করে ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরতে।


এই ভাবেই লেখা হয়ে যায় রুপকথার একটার পর একটা অধ্যায়, কোন না কোন খণ্ডে আপনিও হয়ত একটা জলজ্যান্ত চরিত্র। কিন্তু মনে রাখতে হবে খেলাটা কখনোই কারোর জীবনের বাইরে নয়। একটা শৃঙ্খলা, একটা সৌন্দর্য, একটা শিল্প জড়িয়ে আছে। দিনের শেষে যা একটা জীবনের প্রেক্ষাপটকেই ফুটিয়ে তোলে। কেউ হাঁটু মুড়ে ভেঙ্গে পরবে কান্নায় কিংবা গর্বের এক ফালি কাপড় জড়িয়ে ছুটে বেড়াবে মাঠের সীমান্তে। হার আর জিত যে একটা সহজাত ধর্ম, একে অপরের সাথে জড়িয়ে আছে আঙ্গাঙ্গি ভাবে সৃষ্টির আদিমূল থেকে,এই মুহূর্তে তাকে বিশ্বাস করতে শিখি। কান ফাটানো চিৎকারে রাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, বর্ণবিদ্বেষ, অরাজকতা, সন্ত্রাসবাদ দিশেহারা হয়ে পড়বে কয়েক মুহূর্তের জন্য। ভেবে দেখুন অনেক কটা মানুষ নতুন উদ্যমে উঠে দাঁড়াবে আগামীর দিনের দিকে তাকিয়ে। আমি আপনি যে যার বাড়ী ফিরে যাব। হাসি মুখে। একটা যুদ্ধের সমাপ্তি এইভাবেও হতে পারে। বদলাচ্ছে সময়। বদলাচ্ছে সাহিত্যও। আমরা এখন অনেক খোলা মনের মানুষ, এই হারিয়ে যাওয়ার যুগেও আমরা সুন্দর দেখতে ভালবাসি। তর্জনী তুলে সুন্দর দেখাতে ভালোবাসি। 

 হার জিতে মেতে না থেকে আমরা উপভোগ করতে ভালবাসি। তাই সকলের উদ্দেশ্যে, খেলা দেখুন, মেতে উঠুন কিন্তু ভুলে যাবেন না সাহিত্যকে, জীবনকে। ফাকতালে চোখ রাখুন ‘c/o:সাহিত্যে’র পাতায়। আষাঢ় সংখ্যায় থাকছে কিছু অভিজ্ঞ কলমের সৃষ্টি আর কিছু তরুণের দৃঢ় পদধ্বনি। অনুবাদ সাহিত্যের কিছু ভালো কাজও থাকল। আর গল্পে এক আবেগপ্লুত স্বপ্ন তুলে ধরল এক অচেনা কলম। সাথে নিয়মিত বিভাগ তো থাকছেই। পড়ে দেখুন। আপনাদের মতামত জানান। আমরাও গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে এগোতে চাই। পরিশেষে বলি, ভালো থাকুক ফুটবল, ভালো থাকুন আপনিও। 

                                                                                                                        
                                                                                                                          সৈকত মান্না
                                                                                                                        ৩রা আষাঢ়,১৪২১

কবিতাঃ আলোপ / বারীন ঘোষাল


বড় রাস্তার মুখরা লোপ পেলো
রাস্তার আলোগুলো
একে আমরা আলোপ বলে জানলাম
#
যেমন বর্ষা উঠি উঠির বর্শাধারী ঠায়
ফুলবাগিচাকে গুলিস্তাঁ বলা যেখানে
পাহাড়ের কিউ এগোচ্ছে না আমি তাও বুঝি না
বিজনের তাপ্পির বিজলি মেখলাটি
#
এই তিন চারটে লাইনেই এখন ট্রেন চলবে
সেই বাষ্পচালিত শকট শিস
ত্রিকোণমিতি
ছাড়া বস্তর ত্রিকোনমিতির চিত্রগান

                                 ডাবিং চলছে

কবিতাঃ দাড্রোন / অসিত ঘোষ


দুহাজার নিয়ম এঁকেবেঁকে চলে গেছে মুঠোচেতনায়।ভূতবিদ্যা লাবন্যচাঁদকে এঁটো করে হাঁটুমুড়ে তোমারই 
কোটরে দাদাই ছাতা ধরে।হুলুস্থূল মুখপোড়ারা মুখ পোড়ায় পোড়ায় হুলোর গামছা ধরে।চলেছে চলবে 
গুঁতোর ধাঁধাঁয়।জুজুকর,জুজু কর,ছুঁতোধর,ছলদড়,ছোবল-বিন্যাস, শান্তিগেঁজা,গণতন্ত্রছাতু,সোজাছুঁচ,বেঁকা 
আঙুল ...দুঁদে শাক্তকুল,খুদে আসক্ত-অশক্তকুল খঞ্জনি নিয়ে বসে আরামচাবুকের তলায়।

যে বছর...রে রে...যে বছর কালশিটে...যে বছর...তেলের ঠেলায় জলের বাস্ত্তভিটে গেলো গেলো...ছবিকষ্ট 
রয়েসয়ে...কসাইখানা দিলিস বদলে বদলে...ছোঁ-ভোঁ-সোঁ-বোঁ বিদ্যায় গাধাকে ঘোড়া বানানো যায়, ঘোড়াকে 
গাধা ও মারা।তারপর ফাঁসঘাঁটির খইফোটানো ড্রোন, প্রাণ প্রতিদান দে একলব্য!

কলাইয়ের খেতে হারায়েছে যেতে

দুধুশিশু,দেখেছ কেউ তাকে !

কবিতাঃ বসন্তের দাগ ও ডালপালাগুলি / জুবিন ঘোষ




কথা শুনেই বুঝলাম এর পেছনে নিশ্চয়ই বসন্তের দৌরাত্ম ছিল
কিছু কিছু গাছ, পাখিরা ফিরলেও জানত নীচে নিশ্চয়ই কিছু মানুষ আছে
জীবনের কিছু টুকরো ডালপালা ভেঙে পড়া, শুকনো বীজ যা কিছু
খুব শান্ত বাজের মুখ থেকে খসে পড়া যেন,
ভাঙা পাঁচিলের বীজগুলো মাটিদের রস নিতে নিতে ভাবে
কী অপূর্ব সিক্ত আমাদের পারস্পরিক সূত্র
কী অসম্ভব বিশ্বাসী আমাদের হলফ, আকৃতি ও আয়তন
আকরিকের জ্ঞানের সামান্য প্রয়োগ
খনিজের ভিতরের ঢুকে যাওয়া আদি বীজ
আমাদের জৈবিক; ক্রমশ উদ্ঘাটিত হয় খেলাচ্ছলে গালে
এসব সত্য, দৌরাত্ম—চার ছকে লাফিয়ে লাফিয়ে খেলা
                                     তোমার চু-কিত-কিত ডাকে  
আমি না চাইতেও সেই এক্কা-গুটি ছকের বাইরে চলে যায়
আর দোক্কা নিয়ে চলে
                                  গালের মার্কা-মারা গুটি বসন্ত
এসব দাগ আর ডালপালাগুলিই একদিন আমাদের গাছ হয়ে ওঠে ...
তার দাগকেই মূলধন করি পরবর্তী মুখলগ্নির শস্যদানা
আমাদের বীজ পড়ে থাকে পাশে,
                                                 লক্ষ্মীমন্তের মতো
যাদের মুখে বসন্তের দাগ থাকে তারা খারাপ হয় না
শুধু আয়নাই অস্থির করে তোলে

কবিতাঃ দুটি কবিতা / অব্যয় অনিন্দ্য


১। রাজহাঁসের কুচকাওয়াজ

কলম আর শ্যামের বাঁশির কলহে কোকিল এল রেফারী হয়ে -- বানরের পিঠা ভাগ করে পৃথিবীর যাবতীয় চমক ঠোঁটে নিয়ে মেধাস্বত্ব বেঁচে দিল মিডিয়ার কাছে। সেই থেকে মিডিয়াই পৃথিবীর একমাত্র চুম্বক - সুমেরু-কুমেরুর নামজারি করছে মাউথ অর্গানে ঢেউ তুলে।
                   
এদিকে সুপন্থাকে ভাসিয়ে নেয়া নদীটার চরে দাঁড়িয়ে এখন কলম আর বাঁশি দুজনেই মিডিয়ার পেছনে হলদে বুট পরে লেফট-রাইট করে -- কখনও নিরপেক্ষতার বেড়ালটাকে ভিজাতে সমান্তরালে খেঁউড় গায়।

শুনেছি, কোকিল এখন মেধাস্বত্ব ফিরে পেতে কোকিল-বন্ধন করতে চাইছে। কিন্তু বাঘ আর মহিষ দুটোই এখন মিডিয়ার ঘাটে - লম্ফ-ঝম্ফ দৃষ্টিকটু উচ্চতায় উঠে গেলে কোকিলের নাম কাক হয়ে যাবে।

আমিও ভানুমতীকে সংবাদ দিয়েছি -- মেকুড় চলনটা শিখিয়ে দিলে -- জগতের যাবতীয় কলমবাজদের ফ্যাশনটিভিতে ডেকে বলব -- রাজহাঁসের কুচকাওয়াজ নিয়ে লিখুন।


** ক্যাট-ওয়াক = মেকুড় চলন     
                 

২। দুঃখ-সুখ

ঝিকমিক করলেও নিয়ন আলো দুঃখ-রাতের তারা হতে পারে না। দূরত্বই তারাদের সমব্যথী করে তোলে। দূরত্বের সাথে মনে হয় দুঃখের একটা বেয়াই-বেয়ান সম্পর্ক আছে। নিবু কথাটা মানেনি। কাছে এসেছি বলেই নাকি দুঃখ হতে পেরেছি। আসলে কাছে থেকেও আমি অনেক দূরে বলেই দুঃখ হওয়াই নিয়তি।

কিন্তু দুঃখ যাদের শিথানে-পৈথানে আজীবনই বসবাস করে তাঁরা দুঃখের সাথে দূরত্বের দূরত্বকে মাপতে পারেনি। মাপার স্কেলটা চুরি করে কিছু সেমিনারজীবি তাঁদের নাম দিয়েছে প্রান্তিক ছোঁয়ার নাগালে থাকলেও তাঁরা আকাশের তারাদের চেয়েও দূরতম প্রান্তে। তাঁদের দুঃখ নিয়ে কা-কা করতে করতে কিছু দুঃখ-বিলাসী মানুষ মানবতার ভাগাড়ে পৌঁছলে কবি নামে পরিচিত হয়।


দুঃখের গল্পে সুখকে না আনলে সুখ পাণ্ডিত্যকে আড়াল করে ঝুলে থাকে। সুখ সে তো আমার ভাদ্দরবউ তোমার পরস্ত্রী আর ঈশ্বরের আপেক্ষিকতা।  

কবিতাঃ মানচিত্র / রুদ্রশংকর

এতদিন ধরে এত মুখের কাছাকাছি এসে
আমার অনেক দূর হেঁটে যেতে ইচ্ছে করে।
দড়ি বাঁধা কুয়োর বালতির মতো হেলতে দুলতে
লাল হলুদ ইচ্ছেগুলো, সবুজ নীল ইচ্ছেগুলো
আশ্রয় নেয় আধপোড়া লিপির বাড়িতে
আর তখনই অস্পষ্ট বিশ্বাস হাতে নিয়ে
দলা দলা অভিমান হাতে নিয়ে
হাজার বছরের পুরনো মাথায় বসে পড়ে
বন্ধুদের ঠোঁট-কামড়ানো আদরগুলো।
সেই আদরের স্রোত আমার বুক ধরে,
বাহু ধরে নামতে থাকে
আমাদের সম্পর্ক এখন কমবেশি নোনতা মনে হয়,

কমবেশি মিষ্টি মনে হয়। 

কবিতাঃ শেষ তারা / পবিত্র আচার্য্য


এবার থেকে চায়ের কাপে         গুলবো তোকে 
নিত্যভোরে রোদের-অসুখ        পানসে লিকার 
ছাই পড়ে যাক বাড়া ভাতের         সটান বুকে
 গোল্লা পেলে গোল্লাছুট            অঙ্ককষা তাম্রকোষে
হিসেব যদি নাইবা মেলে     চোখের কোনে বালিয়াড়ি
সবই মিছে নেশার মত               চোখ রেখে যা
ডুবতে চাওয়া সিসার-জলা       ঘোরবর্ণ পানপাত্র।

অনেক দিনই রাস্তা জুড়ে               লাল-বাতি 
জুতোর তলায় মাইলফলক        আটকে আছে
সময়-তার শঙ্কুদোলক               মাকড়সা-জাল 
সাদা রঙের কাদা                  আমি ভাবতেই পারি
তুই চলে আয় দেওয়াল ভেঙ্গে       একই ছাতায় 
পায়ে পায়ে অপেক্ষারাত         দীর্ঘশ্বাস চোবাই জলে                                    
আগুন বুক...শীতল মাটি            শেষ তারা।    

কবিতাঃ রোমন্থন ২ / সজল দাস


বরং পায়ের কাছে ফিরে এসো
এসো পদ্ম, নির্মল স্ফটিকে

বেলুনওয়ালা, তুমি
বাবার আঙুল নিয়ে
চলে গ্যাছো ওষুধের দিকে
স্কুল পর্যন্তই
হাফপ্যান্টের যে ছায়াদাগ,

এসো সাবলীল, সাইকেলখানি
ক্রিং-ক্রিং বাজাও

ভুল, এক মহাশয়
জুতোর শৈশবে
ফিতের ভুল শুয়ে থাকে, চুপচাপ

এসো, আয়নায়


বরং চুল বুঝে নিক চিরুনি...

কবিতাঃ রাক্ষস / সুপ্রিয় মিত্র



তিন-সন্ধ্যে নামে।
'গতস্য শোচনা'মুখর নিয়নীয় গোধূলি হাত বুলিয়ে দিলে , রাস্তা-রা ফিরে যায় সড়কপাড়ায়...
রাস্তার দুইপারে বিচ্ছেদ ভারাক্রান্ত বাড়ি-দোকানপাট অন্ধকারের আগে পরেজড়িয়ে ধ'রে নিঃশব্দে কাঁদে......... আরো একটু সন্ধ্যে গাঢ় হলে সৃষ্টিরআদিকালের স্মৃতি-রোমন্থন করে ; তারও পরে, জড়িয়ে আসে সকল উচ্চারন।
পাঁচিলের গায়ে বেড়ে ওঠা অশত্থ , বট , আগাছা সারাদিনব্যাপী কর্তব্য পালনেরপর , জোনাকীর মত চিকমিক করে তাদের যাবতীয় প্রাকৃতিক ক্লান্তি... শিশুরব্যক্তিগত জানালায় সুদূর প্রিয় তারাটি হয়ে ফোটে...।
শিসে ভেসে আসে চির-দুঃখী রফি সাহবের গান
ঘুমিয়ে পড়া রাস্তা দের গুমোট ধূলোর চাদর থেকে
"চাহুঙ্গা ম্যেয় তুঝে শাম স্যবেরে......"
দশ-বারো হাত ছাড়া ছাড়া বাড়ি থেকে ভেসে আসে
কেঁপে ওঠার শব্দ...কবিতা ভাঙে - গড়ে আপনমর্জি
মত।
দশ-বারো হাত ছাড়া ছাড়া বাড়ি থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে তুমুলসাংসারিক অশান্তি । ছেলে বেরিয়ে যায়। বাপ বেরিয়ে যায়। মেয়ে পালায় ।কাঠবেড়ালি , গাছ ও উঠোন বদল করে...
রাত গড়ালে , সকলে ফিরে আসে... হাঁড়ির ভাত খালি হয়ে যায়... কাঠবেড়ালি নিয়ে যায় ফেলে দেওয়া এক-দুটো টুকরো।
পূর্ব -উল্লিখিত বাড়িগুলোর ছাদ ভারী হয়ে ওঠে, নতুন নতুন পুনর্লিখিত হয়কিছু জাগতিক কান্না... পাঁচিলে যে সব তারা বসত গড়েছিল একদা , নির্বোধশিশুর চোখে তাদের একত্রে কোলাহল মাঝরাতের সড়কপাড়ায় লুটোপুটি খায়...
শিশু ঘুমিয়ে পড়ে।
ঢুলু ঢুলু আধবোজা চোখে শেষ ভেসে ওঠে -
মায়ের করুণ মুখ...
কবিতা- কবির চেয়েও ইয়া বড়  হাঁ তার যন্ত্রনা। 

কবিতাঃ ইয়ার প্লাগ / উল্কা


 কান থেকে খুলে ফেলছি ইয়ার প্লাগ
 এই সময়ে আহ্নিক চেটে কেউ কেউ
 প্রক্সি দেয় হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক 

 পথ বদলাই

 পাপ মাখামাখি সরল কবিতা চুষে খাচ্ছে
 বসন্ত বাস্তব।

 ইয়ার ফোন ইকো গাইছে ক্লিভেজ উপ-ত্বকে

 "খালি খালি দোষারোপ মিথ্যে অভিযোগ সন্দেহ 
 আর বাজে বাজে কথা"
 কথায় কোথায় চুপ পালাচ্ছে 
 ডাউন তরঙ্গে চাঁদ পোহানো আড়ি 
 ভাব-লেস মুহূর্ত নো এট্রি
 গ্রিন সিগনাল 

 আরশোলার তেকোনা হাইপোফ্যারিঙ্কসে
 ব্লুদন্ত বয়ে বেড়াচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
 মিত্র পক্ষ ঈশ্বর সৌরভ 
 আর অলৌকিক বোমকূপ
 খুলি ফাঁকি ঘুরপাক 
 প্রেম চটা পিস্তল ফোনবুক আউস নিশানা
 রোজ রোজ খুন হয়ে পাঁজরে মৃত্যু লিখিনি 
 শুধু হেড ফোন বুথ থেকে লং জাম্প মিটারে 
 বা কানের প্লাগটা রেখেছি

কবিতাঃ সিমেন্ট মানুষ / সেলিম উদ্দিন মন্ডল






ঘর আঁকা কিভাবে শেষ করব?
ডাইনিং ধরে চলে গেছে রাস্তা।

এখন দেওয়ালের শ্যাওলা চাষ
সিঁড়ি থেকে ছাদ পেরিয়ে যায়
ধারাপাতের সহজ নিয়মে ।

আমরা সিমেন্ট মানুষ হয়ে

দেখি ব্যালকনিতে ওড়া পাখি ।

কবিতাঃ মাটির কাছে সমস্ত দিয়েছ / অর্ণব মুখোপাধ্যায়


সারারাত ঠায় বসে দূরে চলে গেছে
পায়ের ধুলো বোধহয় ছুয়েছে বাসরঘর,
রজনীর তীব্র ঘ্রাণ মিশে গেছে গভীর বপনে,
আমনের সুবাস বা কর্দমাক্ত মাটিতে
লেপ্টে যাওয়া ভালবাসা নিয়ে একদিন,
এমনি ভাবে তার গভীর ছুয়েছিল
বৃষ্টি নাই, মাটির জল শুষে বেড়ে উঠছে ভাত
মরে যাচ্ছে ঘর ; সরে যাচ্ছে পথ
ভাতের সুবাসের মতই তার মুখ
সমস্ত শরীর ক্লান্ত ; মাটি লেপা উঠোনে
টিমটিম আলো, এক থালা ভাত , আজলাজল
লেবুর গন্ধে বিভোর শরীর ধুইয়ে দিছে তালের পাখা
সারারাত ঠায় বসে দূরে চলে গেছে
একফসলা জমিতে মরে মরে গেছে ঘ্রাণ!
লন্ঠন উসকে দিল না কেউ
ঝিঝিটা বেকার ডেকে মরলো সে রাত

কবিতাঃ বাবা'কে ভালোবেসে বলছি / হিমেল হাসান বৈরাগী


বাবা'কে ভালোবেসে একটি কবিতা লিখবো বলে
দীর্ঘ সতের বছর ধরে রাত জেগে থাকি
আমার বাবা মালিকানাধীন একটি ডিস্পেন্সারীতে মাসিক বেতনে কাজ করেন
যে কথাটি বলতে গিয়ে
আমি বহুবার মুখ চেপে ধরেছি লজ্জ্বায়
যে কথাটি বন্ধু-পরিচিতজনের কাছে লুকিয়েছি বহুবার
সেকথাটি আমি আবার বলছি-
" আমার বাবা মালিকানাধীন একটি ডিস্পেন্সারীতে মাসিক বেতনে কাজ করেন "
সবার বাবার মতো আমার বাবা কোনদিন শ্রেষ্ঠ হতে পারেননি,
শ্রেষ্ঠ বাবা'রা খেলনা ভেংগে গেলে নতুন খেলনা কিনে দ্যায়,
ছুটির দিনে পরিবারের সকলকে ঘুরতে নিয়ে যায়
আমার বাবা ঈদ আর গুরুতর অসুস্থ্য না হলে ছুটি পেতেন না
শ্রেষ্ঠ বাবাদের পকেটভর্তি টাকা থাকে
রাস্তা দিয়ে হেটে গেলে সকলে সালাম দ্যায়
আমার বাবা শ্রেষ্ঠ হতে পারেননি,
আমার বাবা বহুবার শ্রষ্ঠা হয়েছেন
পৃথিবীর সকল শ্রেষ্ঠ বাবা ও তাদের সন্তানদের বলছি-
" আমার বাবা মালিকানাধীন একটি ডিস্পেন্সারীতে মাসিক বেতনে কাজ করেন "
শ্রেষ্ঠ বাবা'রা অনেক সৎ ও চরিত্রবান হন
আমার বাবা'র সততা নিয়ে প্রশ্ন আছে,
মা'র কাছে বাবা'র চরিত্রহীন গোপন ছবিগুলো দেখেছি
আমাদের পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপের সময়,
তিন মাস অন্তর অন্তর মা'র ট্রিটমেন্টের সময়
বাবা ডিস্পেন্সারী থেকে ঔষোধ চুরি করে
অন্যত্র বিক্রি করতেন
আমার বাবা কোনদিন শ্রেষ্ঠ ছিলেননা
আমার বাবা বহুবার শ্রষ্ঠা হয়েছেন
পৃথিবীর সকল শ্রেষ্ঠ বাবা ও তাদের সন্তানদের বলছি-
" আমার বাবা মালিকানাধীন একটি ডিস্পেন্সারীতে মাসিক বেতনে কাজ করেন "
বাবা'কে কোনদিন কষ্ট পেতে দেখিনি
বাবা কষ্ট পেলে বাংলা খেয়ে মা'কে বেধরম পেটাতো
মা কষ্ট পেলে কাঁদতো
বাবা বাড়ির বাইরে গেলেই জেলমুক্তির আনন্দ পেতাম
মনে মনে আনন্দ উৎসব করতাম এই ভেবে যে,
কাজের চাপে বাবা আজ রাতে ঘরে ফিরবেন না
অথচ জানতাম না, বাবা আমাদের পাশে না রেখে
কোনদিন পেট ভরে খেতে পারতেন না
আমাদের বুকে না জড়িয়ে বাবা ঘুমাতে পারতেন না
আমি জানিনা, এভাবে কতশত দিন তিনি খালি পেটে,
দোকানের সাটার নামিয়ে টেবিলের উপর শুয়ে রাত কাটাতেন
দুরে কোথাও, বহুদুরে কোথাও হয়তো বাবা আছেন
আমাকে দেখতে পান, প্রচন্ড রাত জাগলে
বিকট আওয়াজ করে ধমক দিয়ে বলেন-
খোকা অনেক রাত হয়েছে এবার ঘুমাতে যা
আমার ঘুম আসেনা বাবা
তোমার ইচ্ছে মতো আমি কিছুই হতে পারিনি
না ডাক্তার, না ইঞ্জিনিয়ার, না মানুষের মতো মানুষ
তোমার অনিচ্ছায় আমি আজো কবিতা লিখি বাবা
আমার বাবা কোনদিন আমার কাছে শ্রেষ্ঠ হতে পারেননি
আমার বাবা আজীবন আমার কাছে শ্রষ্ঠা হয়ে থাকবেন
বাবা'কে ভালোবেসে বলছি-
" আমার বাবা মালিকানাধীন একটি ডিস্পেন্সারীতে মাসিক বেতনে কাজ করেন "

কবিতাঃ গণিতঘর / মমিন মানব



নিজস্ব সূত্র দিয়ে প্রত্যেকে তাদের গণিতঘরে বসোবাস করে।
কাটাকুটা পৃষ্টাগুলোকে আমার জীবনের অন্তর্গত ডায়রি ভাবতে পারো;
যে সকালবেলাদের আমি কোনোদিন আলিঙন করতে পারি না
তাদেরকেই আমার প্রিয়তম বর্ষাকাল বুঝে নিলে তোমার ভুল হবে না।

চোখ ফেটে ছিটকে যাওয়া কান্নারা হয়তো সুকন্ঠি হাসি হয়েই জন্মে ছিলো!
তবু বুকের নদীতে যে পলি জমে জীবনটা উর্বর হওয়ার কথা
ওরা এখোন কঙকর হয়ে আঘাত করছে আমার পৌরাণিক পা দুটো,
সুচালো তীর হয়ে ওরাই ঢুকে পড়ে কায়দাসিপারায় লুকিয়ে রাখা ময়ুর পাখনার
কোমল ছেলেমানুষিবেলায় আর কালচে হয়ে আসা মধ্যবয়সি কলিজায়।

আমার যুবতি মায়ের পুরনো কাপড়টার মতোন প্রিয়তম স্বপ্নকে
প্রতিসন্ধ্যায় সবার মতোনই ছিঁড়াফাঁড়া জায়গাগুলো সোনামুখি সুইয়ে সেলাই করি


আর বাবার হাফহাতা সাদা গেঞ্জিটা গায়ে দিয়ে ঢুকে পড়ি গণিতঘরে।

কবিতাঃ কিংবদন্তি পুনঃনির্মাণ / মোহাম্মদ আন্ওয়ারুল কবীর


আমাদের একজন পিতার প্রয়োজন
শুরু হলো খনন এবং আমরা আবিস্কার করলাম
পিতা, তার পিতা, তার পিতা, তার পিতা
এবং শেষটায় আদিপিতা।          
কান টানলে মাথা আসে
তাই পেয়ে যাই আদিমাতাকেও
সৌভাগ্য আমাদের তিনি আদিতম নন
প্রাচীনতম শিশ্নের অধিকারী পিতা থেকেই জারিত তিনি -
শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হতে লাগলো আকাশ বাতাস
" জয়, পুরুষ কী জয়, জয় পুরুষ কী জয়"
অতঃপর আমরা উর্ধ্বলোকে দৃষ্টিপাত করলাম
আমাদের প্রয়োজন অলীক গোরখোদকের
যিনি দিনশেষে আমাদের কবর দেবেন এবং
যার ইশারায় কোন এক মাঙ্গলিক ভোরে
আমরা আবার জিন্দা হয়ে ডুগডুগি বাজাবো
আমাদের দৃষ্টিগোচর হলেন তিনি
অতিকায় এক শূন্য পিড়িতে বসে হুকো টানছেন -
শূন্যকে ভয় পাই বলেই আমরা তার বাম হাতে ধরিয়ে দিলাম
ধারালো ত্রিশুল এবং ডান হাতে দিলাম রেফারীর বাঁশী -
এরপর শূন্যকে আমরা
আমাদের স্ব স্ব গোষ্ঠিমাফিক নামকরণ করলাম
সবশেষে মহান তিনি তন্দ্রায় গেলেন -

এখনো গভীর তন্দ্রায়

কবিতাঃ বোকা ওয়ালেট / অশোকবিজয়


কেউ কি হাতিয়ে নিলো?
এমনটা হয় না সাধারণত কেওয়াপাড়ায়
আগে হতো, অনেক সল্পতাকে দায়ী করা যায়
বিদ্যুৎ, প্রশস্থ পথ, জন বাহুল্য, শিক্ষা- ইদানিং
শিক্ষাকে রাজনীতি বলা যায়, বণিকের ধন উৎসমূল
অথবা রাজনীতি বণিকের হয়ে গেছে, বেনিয়াতন্ত্রসে যাক্,
সল্পতা আরো থাকতে পারে, সময়ের সাথে সাথে সল্পতা পাল্টে যায়
এমনটা হয় না সাধারণত কেওয়াপাড়ায়, আগে হতো
সিগারেট ফুরিয়ে গেলে হাঁটতে হাঁটতে বেশ খানিকটা পথ এগিয়ে
একটা টং ছিলো- অগোছালো
মাটির চুলায় কয়লা পুড়িয়ে কেটলিতে পানি ফুটাতো
কেয়ামত চাচা, অসুস্থ থাকলে কুসুম, একমাত্র উত্তরাধিকারী;
নিকটবর্তী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতো
কুসুম পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলো, পানি ফুটাতো বাবার অবর্তমানে
চাচা'র টং'টাই ছিলো একমাত্র ভরসা সিগারেট ফুরিয়ে গেলে
কিছু একটা মিলে যেতো, কখনোই ভার্জিনিয়া ব্লেন্ড পা্ওয়া যায় নি;
এতো পূঁজি কই, খুঁজলেই হেসে বলবে হয় কুসুম না হয়
তার একমাত্র আত্মীয় কেয়ামত চাচা; সত্যিই তো পূঁজি কই?
কালো আলখেল্লার ভিতরে বাড়তে থাকে পূঁজির বাজার
শুধু পূঁজি ছিলো না কুসুম আর কেয়ামত চাচা', তারপরও পূঁজি ছিলো
স্বপ্ন, সেটিও অনেকবার ভেসে বেড়িয়েছে কল্পনার হাওয়ায় সে যাক
এমনটা হয় না সাধারণত কেওয়াপাড়ায়, আগের হিসাবে সে যাক
ভয় জড়িয়ে এদিকেই আসছে একটি মেয়ে
কেউ কি হাতিয়ে নিলো?পুরুষের চোখ
দৃষ্টিভ্রমণ শেষে চোখে গিয়ে স্থির হয়, তামাটে রং শরীরের
অন্য কোথাও বিশেষ কিছুই নেই শুধু ভেজা ভেজা ক্রোধ, জলজ আকুতি;
এদিকে আসছে মেয়েটি কিন্তু এদিকেই কেন আসতে হবে? দিক তো আরো আছে!
দশ দিক! অবশ্য সব দিকে মানুষ যাবার নয়
আসলে এই বোধটি এসেছে ভালো না লাগা থেকে, কীভাবে লাগবে?
আকর্ষণ না থাকলে ভালো লাগে না- মানুষ, জন্তু অথবা বস্তু যে কোনোকিছুই
"চিনতে পারেন নি?"
ঠিক সামনে দাঁড়ানো অনাহূতের প্রশ্ন অস্বস্থিতে ফেলে দেয়, চেনার কি কথা ছিল?
সবাইকে চেনা যায়?
"চিনতে পারছেন না কেন? কেউ চিনতে চায় না এখন"
কেন চিনতে হবে? এতো অভিমান নিয়ে কেউ কখনো চেনাতে আসেনি
অভিমান গাঢ় হলে জল তার ভাষা হয়ে যায়,
সরল জলের ধারায় জানা গেছে
কেওয়াপাড়ায় এমনটা হয়নি আগে, পূঁজির জন্য
দু'শো টাকা ঋণ ছিলো তার উপর আরো পৌনে তিন',
মাসটা পেরুলেই সুদ বসবে চক্রবৃদ্ধি হারে, মানুষ হলে বুঝে যেতো
বুঝেনি চুল্লীতে কয়লা পুড়ানো আগুন, টং'টা জ্বলে গেছে সব নিয়ে
মাস শেষ হতে চারদিন বাকি; কেয়ামত চাচা'র অন্তর্ধান মেনে নিতে পারেনি
সেজন্যেই কি বিদ্রোহ করলো কয়লা পুড়ানো আগুন?
কিন্তু আগুন তো নিরাসক্ত; সে যাক
এবার বুঝা গেলো কেন চেনাতে এসেছে কুসুম

শুধু বুঝতে পারেনি তখন পেছন পকেটে থাকা বোকা ওয়ালেট

কবিতাঃ আর কোনও আলোঘর দৃশ্যমান নয় / শান্তনু কুমার দাশ


আলো ছাড়াই ভেসে যেতে হবে আজকাল,
অনেকেরই আলোর প্রয়োজন হয়না
অনেকেই মাথা নীচু করে ঝুলে থাকে কার্নিস থেকে
ঝুলে থাকে শিকারের অপেক্ষা, স্যাঁতস্যাঁতে মাটি
ঝুলে থাকে মৌলবাদ,
শস্ত্রের ঘাঁটি
সিরিয়া মিশর লেবানন
ধোঁয়া ওঠা মৃত্যুময় হলদে শহর, আলো নেই,

অন্ধকার চরাচরে একটি ময়ূর সিংহাসন

কবিতাঃ একগুচ্ছ কবিতা / অমিত ত্রিবেদী


সেই ডাকলে, শুধু কিছু লোকজানাজানি হলো...
ফিরে আসছি, এমন সময় পিছন থেকে ডাকলে
লাহাবাড়ির বারান্দা থেকে একরাশ মুখ ঝুঁকলো
সানাইয়ে অকাল-কাজরী আরোহে তখনও
সেই ডাকলে, কিছু লোক জানাজানি হলো

আজকাল মেঘ থাকে নিয়মের মতো পশ্চিমাস্য
মনখারাপের সূর্যাস্ত এ শহরে বিরল
যেমন বিরল করেছ কাঁধের সূক্ষ্মতমা তিল
ওড়নার আবছায়ে

বঞ্চনা সব পুরুষকে পুরুষকার বানায়নি
ইতিহাস সেরকমই বলে
একটা ছেঁড়াফ্রক কিশোরী ভাইকে নিয়ে রাস্তা পার হলো
একটা ভোকাট্টা চাঁদিয়াল ইতিহাস পার হলো
তুমি চিরদিন ট্রামলাইনের ওপারেই

তাই ফিরে আসছি
এমন সময় পিছন থেকে ডাকলে
রাজবাড়ির গেটে একরাশ কৌতুহল
সানাইয়ে কাজরী থমকেছে সবে

সেই ডাকলে, শুধু কিছু লোকজানাজানি করে


কিছুটা বিশদ হোয়ো এইবার...

যেখানে থমকে গেল যাবতীয় গান, কথামালা

সেইখানে ঝোঁকো যদি জলের দর্পনে
পরিচিত মুখ আশা করে নিবিড় শিথিল রাখো গ্রন্থি, মেখলা
নুড়ির শান্ত বিসর্পণে কেঁপে যাবে বিম্বিত মুখ, দেখো!
পটভূমিকায় থাকা মৌন বটের ঝুরি ভেষজের মত কাছে এসে
বলে যাবে নিরাময়, অথবা নিরুদ্দেশে
উড়ে যাওয়া আমাদের আলাপের পাখী
আবার নতুন করে বাসার স্বপ্ন নিয়ে ফিরে আসে যদি
তাকে তুমি শাখা দিও এইবারে, পিঞ্জর নয়, জোনাকি
সারারাত আজও জ্বেলে রাখে নিরবধি
অভিসার সংকেত
উড্ডীন হলুদ নিশান নিয়ে দূরে ডাকে সরষের ক্ষেত...



এইখানে থমকেছে অন্তরা-সঞ্চারী পয়ারের পদচারনারা
পঙক্তিসুখী অনুপ্রাস ফিরে গেছে, আঙুলের অভ্যাসে করাঘাত বৃথা কড়ানাড়া
তাও ক্রমে ফুরাবে যেদিন
জলের দর্পনে ঝুঁকে খুঁজে পেলে আমার ঠিকানা
কৃপণা ভীষনই, জানি, তবু তুমি ভরো চিঠিখানা
জমানো অক্ষর দিয়ে, ভেবে নিয়ে বাজে তখরচ
তুমি কিছুটা বিশদ হোয়ো এইবার...



আমি তো পারিনি ছুঁড়ে ফেলে দিতে শঙ্খবলয়!

অসহায় লাগে খুব যেন খুব মেঘ করে আসে

বাড়ি থেকে বহুদূর চলে এসে পথ ভুলে যাওয়া
যতটা ধূসর
অসহায় লাগে যেন জেগে আছি একা বালুচর
কোথাও গাছালি নেই থমকেছে হাওয়া
যেন আর ফিরে যাওয়া পান্থনিবাসে
খুব দূরপরাহত আজ যেখানে তুমিও ঘুমে শাদাবিছানায়
তোমাকে ডাকবো তুমি শুনবেনা কোনওদিন একা একা কাঁটাঝোপ গুল্মছায়ায়
হাঁটছি তোমাকে ছাড়া বকেয়া জীবন...



অসহন লাগে খুব যেন শীতে পত্রমোচীবন
হিমের অছিলা করে বাকল বদলে নিল, নিল কিশলয়
আমি তা পারিনা কেন, আমি তো পারিনি ছুঁড়ে ফেলে দিতে শঙ্খবলয়!



কলস্বনা গো!

বাঁশীর ভিতর শূণ্যতাগুলো হাওয়া থেকে নেয় সরগম টেনে 

আমার ভিতরে সাতসুর ছিলো, ঠোঁট দিয়ে তুমি বাজিয়ে দেখোনি



আমার ভিতর টানটান ছিলা, তানসেনী তোড়ি
মিজরাব খুলে আমাকে ছোঁওনি, বাজিয়ে দেখোনি



মেঘ চলে গেলে বৃষ্টিশ্রান্ত পুবদিগন্ত,
তাকিয়ে দেখোনি, সাতরঙ ছিলো
সূর্যের আলো সাদা ছিলো বলে অবিশ্বাসিনী 
রামধনুটাকে গল্পকাহিনী 
ভেবে নিয়েছিলে 



তাঞ্চোই শাড়ি, অঞ্চল ক্ষীণা 
ধরবে কি করে উঠলে দখিনা 
উড়ে আসা ফুল, পেরজাপতিটি



কলস্বনা গো, হয়না প্রতীতি 
বাজ না পড়লে? তড়িল্লেখাতে 
ঝড় বলা ছিলো, পড়তে শেখাতে 
কাছে যে এসেছি! দক্ষিনা দিও!





অণুকবিতা
১।

যার কাছে যাবে বলে টিয়ারঙ মাখলে শরীরে
আঁচলে ময়ূর, নাকি হৃদয় হয়েছে নট? পঞ্চম তিরে
নিশানা সঠিক আছে? সে জানে গোপন অভিসারে
তার কাছে নির্মোক যাবে? সর্পিনী, বলেছ তাহারে?

২।
লোহিততপ্ত করেছ নিজেই, এখন আঘাতে আঘাতে
সব ওঠাপড়া সমতল করা বাকী।
শানিত কৃপাণ হতে পারি, পারি পালটা আগুন লাগাতে,
পানশালা গেলে, কোথায় ঢালবে, সাকী?
৩।
যাকিছু বিস্রস্ত, হীন, তোমাকেই দেওয়া যেত সব
কোজাগরী ভোর থেকে শিশির আর শিউলির শব,
দূর্বায় হীরেমোতি, কলপাড়ে বয়ে যাওয়া জল, পাখীরব,
এখন যে কাকে দিই! প্রদীপ নিভেছে, মা গো! এখনও কি ফুরালোনা স্তব!
৪।
খুব দ্রুত চলে গেলে কেউ
দিগন্তরেখায় থেকে সূর্য তাকে দেখে নেবে রোজ।
কেউ না উদাস হলে, বেখেয়ালে সাজানো আকাশ, নদীটির ঢেউ

নষ্ট হয়ে যেতে যেতে তবু নেবে খোঁজ---
CSS Drop Down Menu
আমাদের লেখা পাঠান careofsahitya@gmail.com- এ মেল করে।