প্রতিদিন গাজায় যা ঘটছে তা দেখে মুখে কুলূপ এঁটে ফেলেছে সুহৃদ নাগরিক সমাজ। এর মধ্যেই টালবাহানায় রয়েছে বহু দেশ ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির কথা ভেবে। ঠিক করে ভেবে উঠতে পারছে না এই মুহূর্তে বিদেশ নীতি কি হওয়া উচিৎ?
আমাদের মাননীয়া বিদেশ মন্ত্রী বন্ধু দেশের সমালোচনা এক্কেবারেই বিশ্বাস করেন না। মিত্রদেশ সম্পর্কে কোনরকমের অবমাননাকর কথা বলাই যেন ঠিক নয়। তাই সাংসদে অধিবেশন চলাকালীন এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করার অনুমতিই পায়নি রাজনৈতিক বিরোধীরা। দেখেশুনে সারা দেশবাসী ভাবলেন সরকার ইজরায়েলের পাশেই আছেন।
অথচ কয়েকদিন পরেই রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনের মঞ্চে ইজরায়েলের অনৈতিক সামরিক অভিযানের বিপক্ষে ভোট দিলেন অন্যান্য ‘ব্রিকস্’ দেশের সঙ্গে। এই সমারসল্ট এর কারণ বোঝা সত্যিই দুষ্কর! কোন নীতিবাদ এর ধ্বজা ধরে সরকার বসে আছেন?
এই ইজরায়েলই কিনা, রাষ্ট্রপুঞ্জের সদস্য হওয়ার জন্যে ভারতের আবেদনকে সমর্থন করে না। তবে কেন সরকারের এই বন্ধু প্রীতি? প্রকাশ্যে মুখ খুলতে এতো কুণ্ঠাবোধ? ভারতবর্ষের এই আপাতবিরোধী অন্তর্বিরোধের হেতু বোঝা যাচ্ছে না কিছুতেই।
পোখরান বিস্ফোরণের পর যখন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিষদ ভারতকে তুলোধোনা করার কথা উত্থাপন করেন। ভারতের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয় ইজরায়েল তাতে ভারতের পাশেই ছিল। এই হৃদ্যতার কথা মাথায় রেখেই বোধহয় পার্লামেন্টে এইরকম আচরণ। তাছাড়া দেশের সুরক্ষার দিক থেকে, অস্ত্র আমদানির ব্যাপারে ভারত অনেকটাই নির্ভরশীল ইজরায়েলের কাছে। ইসলামি সন্ত্রাসের প্রশ্নেও ভারত ইজরায়েলের বন্ধুত্বপূর্ণ সমীকরণ অত্যন্ত জরুরি।
অন্যদিক থেকে ভাবলে এটাও ঠিক অস্ত্র ব্যবসার ব্যাপারে ইজরায়েলই অর্থনৈতিক বাজার ভারতের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। অন্তত ইজরায়েলের অস্ত্র রফতানির পঞ্চাশ শতাংশ এ দেশেই আসে। তাই মানবিক মূল্যবোধের কথা মাথায় রেখে অন্তত ফোঁস করার কথা ভাবলেও ভারতের চলত।
এই অগ্নিগর্ভ বিদ্রোহে যেখানে মৃত্যুর ঢল পড়ে যায় সেখানে শুধুই সুবিধাবাদ এসে নাড়া দেবে? পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশের কাছে এটাই কি আশা করা যায়? এত সব অশান্তি আর অস্থিরতা কাটিয়ে জীবনের মূল্যবোধ ভাবার সময় বোধহয় এসে গেছে আমাদের সামনে! আর কতদিন চলবে এইরকম ধ্বংস মৃত্যুর খেলা? নাগরিক সমাজ কবে বুঝবে জীবন নাশের প্রশ্নে আপসের নীতি বন্ধ হওয়া উচিৎ। অন্যথায় সারা পৃথিবী অতুল বিশ্বাসে দেখে যাবে অন্ধকার। আর সেই অন্ধকারে ফুটে উঠবে কবন্ধের নৃত্য।
পরিশেষে, আজ এক বিশেষ দিনে প্রকাশিত হতে চলেছে আমাদের ব্লগ। সবাই আমরা আহ্লাদিত স্বাধীন বলে। সবকথায় ‘হ্যাঁ’ না মেলাতে পারলে দেশদ্রোহী হওয়ার তকমা থেকে নিজেকে বাঁচানোর কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে হাঁটছি আমরা। এই মহৎ ‘স্বাধীনতা দিবসে’ দেশের সুশীল স্বাধীন নাগরিক হিসবে আমরা কি চেয়ে নিতে পারি না আমাদের কলমের অধিকার। অন্ততঃ উচ্চারণটা সফেদ হতে পারে? মানুষের ভাবনার মধ্যে ‘রাজনৈতিক ভিন্নস্বর’ খোঁজার মহাযজ্ঞ বন্ধ হতে পারে।
পবিত্র আচার্য্য
২৯শে শ্রাবণ,১৪২১