আমাদের লেখা পাঠান careofsahitya@gmail.com-এ। ভালো থাকুন সকলে। চলতে থাকুক কলম। বলতে থাকুক শব্দ।

প্রচ্ছদ

A SAHITYA-ADDA Initiative C/O:sahitya A BLOG MAGAZIN STAY WITH US THANK YOU
bloggerblogger

শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৪

প্রবন্ধঃ আমরা কি প্রকৃতই স্বাধীন? / মনীশ বিশ্বাস



  

ভারতের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় ১৫ই আগস্ট তারিখে। ১৯৪৭ সালে এই দিনটিতেই ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছিল। সারা দেশে স্থানীয় প্রশাসন স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। দেশের প্রধান অনুষ্ঠানটি হয় দিল্লি লালকেল্লায়। ১৯৪৭সালের ১৫ই আগস্ট স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু তাঁর বিখ্যাত নিয়তির সঙ্গে অভিসার অভিভাষণটি প্রদানের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তারপর থেকে প্রতি বছর ভারতের নির্দিষ্ট প্রধানমন্ত্রীরা ১৫ই আগস্টে লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলন করে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নেতা ও শহিদদেরও শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া দেশব্যাপী সমস্ত বিদ্যালয়ে, পাড়ায় পাড়ায়, বিভিন্ন ক্লাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয় ও দেশাত্মবোধক গান শোনার মধ্য দিয়ে ১৫ই আগস্ট দিনটি জাতীয় ছুটির দিন হিসাবে পালিত হয়।
      কিন্তু বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে, স্বাধীন ভারতের নাগরিক হয়ে এটুকুই কি যথেষ্ট কারণ স্বাধীনতা দিবস পালন করার? শুধুমাত্র ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তিলাভ করাই কি স্বাধীনতা? এটুকুই কি যথেষ্ট শ্রদ্ধাজ্ঞাপন সেই সমস্ত শহিদদের প্রতি, যারা নিজেদের প্রাণ বলিদান দিয়েছেন ভারতবর্ষকে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন করার জন্য? আমরা কি চাই না আমাদের চারিপাশে সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা দুর্নীতি থেকে স্বাধীন হতে? আমরা কি চাই না একটা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ সমাজে বেঁচে থাকতে? আমরা কি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থা এবং দৃঢ়তার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার দাবি করতে পারি না? আমরা কি প্রশ্ন করতে পারি না, কেন আমাদের অর্থনীতি সামান্য কিছু লোকের সুবিধার্থে, কেন সমগ্র ভারতবাসীর কথা ভেবে নয়? আমরা কি সত্যিই স্বাধীন যখন সারা দেশে রাজনৈতিক ক্ষমতার এত আগ্রাসন? স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় একজন ভারতীয় হিসাবে এই প্রশ্নগুলি কি আমাদের মাথায় আসা উচিত নয়?
একজন ভারতীয় NASA বিজ্ঞানী ও ডিজিটাল ক্যামেরার আবিষ্কারক ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালনের সম্পর্কে ৬৮তম স্বাধীনতা দিবসে মন্তব্য করেছেন-  
“It is a poor attempt to disguise the blatant ‘unpatriotic’ attitude on display 364 days of the year”

সত্যিই তো, বছরের বাকি ৩৬৪দিনের স্বাধীনতার কথা না ভেবে শুধুমাত্র ১৫ই আগস্টের দিন দু-কলি বন্দে-মাতরম্ গেয়ে বা শুনে ছুটি উপভোগ করা বা ফেসবুক, টুইট্যারে জাতীয় পতাকার ছবি শেয়ার করা বা গদগদ হয়ে ‘Happy Independence Day’ মেসেজ শেয়ার করার নামই স্বাধীনতা নয়, স্বাধীনতা একটি অনুভূতি এবং এই অনুভূতি যদি আমরা বছরের বাকি দিনগুলিতেও উপভোগ করতে পারি তবেই আমরা প্রকৃত স্বাধীন।
Malcolm X –এর কথা অনুসারে একজন মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত শান্তি বা স্বস্তি পেতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে সমস্ত দিক থেকে স্বাধীন হতে পারছে।

“You can’t separate peace from freedom because
no one can be at peace unless he/she has his/her freedom.” – Malcolm X 

বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে ভারতবর্ষে নারী সুরক্ষা, মানুষ কেনা-বেচা, দুর্নীতি ইত্যাদি প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে, ছড়িয়ে পড়েছে ভারত মায়ের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে। এমত অবস্থায় একজন মানুষ সর্বোপরি একজন ভারতীয় কিভাবে শান্তি বা স্বস্তি পেতে পারে? ,?আর তাই যদি নাই পারে তাহলে এ কেমন স্বাধীনতা? আমরা তো এ স্বাধীন ভারতবর্ষ চাই নি যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বলতে হয়-

“ধর্ষণ ভারতের জন্য একটি লজ্জার উৎস’ , ধর্ষণের            
       কারণে আমাদের মাথা নিচু হয়ে গেছে।’’

বা সমগ্র দেশের উদ্দশ্যে ভ্রূণ হত্যার সম্পর্কে বার্তা দিতে গিয়ে বলতে হয় না-

“আমি মা, বাবাদের অনুরোধ করছি কন্যাভ্রুণ হত্যা করবেন না। আমি এরকম পরিবারও দেখেছি যেখানে একটি মেয়ে, ৫টি ছেলের থেকে বেশি সফল হয়েছে।’’
বিশ্বের বাকি দেশগুলির কাছে এগুলি সত্যিই ভারতবাসীর লজ্জার কারণ। অথচ সংবেদনশীলতার সঙ্গে বিচার বিবেচনা করে চেতনা পরিবর্তনের দৃঢ় ডাক দেবার পরিবর্তে আমরা এই সমস্ত বিষয় নিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক লাভের চেষ্টাই করে থাকি, মেতে উঠি হুজুগে। কিন্তু এই সমস্ত লজ্জার কারণ অপসারিত করতে শুধুমাত্র সরকার বা সরকারের মুষ্টিবদ্ধ নেতারা বা গুটিকয়েক বুদ্ধিজীবী মানুষই পর্যাপ্ত নয়, সমগ্র দেশবাসীকেই এগিয়ে আসতে হবে, একত্রিত হতে হবে এর বিরুদ্ধেঘটনার পরম্পরায় পুরনো সমস্যাগুলোকে ভুলে না গিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে কৃষক, শ্রমিক, যুবক, শিশু, নারী – সকলের প্রাপ্য অধিকারগুলি ও নিরাপত্তার বিষয়গুলি। সমস্যাগুলোকে সমূলে উচ্ছেদ করে গড়তে হবে নিরাপদ, দুর্নীতি মুক্ত ভারতবর্ষ। তবেই আমরা প্রকৃত স্বাধীনতার অনুভূতি নিয়ে গাইতে পারবো-
“ সারে জাহাসে আচ্ছা, হিন্দুস্তান হামারা’’

বা ভারতীয় হিসাবে গর্বের সহিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে পারবো-

‘সার্থক জনম আমার, জন্মেছি এই দেশে’ ।

1 টি মন্তব্য:

CSS Drop Down Menu
আমাদের লেখা পাঠান careofsahitya@gmail.com- এ মেল করে।