আমাদের লেখা পাঠান careofsahitya@gmail.com-এ। ভালো থাকুন সকলে। চলতে থাকুক কলম। বলতে থাকুক শব্দ।

প্রচ্ছদ

A SAHITYA-ADDA Initiative C/O:sahitya A BLOG MAGAZIN STAY WITH US THANK YOU
bloggerblogger

শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

সম্পাদকীয়ঃ অগ্রহায়ণ-পৌষ সংখ্যা, ১৪২১ // পবিত্র আচার্য্য

                             মরা এমন এক দেশের, যার ইতিহাস সুপ্রাচীন। তাঁর গৌরবগাঁথা পৃথিবীর যেকোনো দেশকে টেক্কা দিতে পারে। সমাজ, ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান সর্বব্যাপী এর বিজয়দ্রুতি প্রথিত। এই দেশ আধ্যাত্মিকতার চারণভূমি। সহিষ্ণুতা, উদারতা আর মিলনমুখরতা দেশের পরতে পরতে বিদ্যমান। আমরা ভারতবাসী। সারা বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে বলতে পারি আমরা গর্বিত এই দেশের জেনে। 

এতসব গৌরবগাঁথার মধ্যেও বিচ্ছিন্ন ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কতিপয় অন্ধগলি। জঙ্গি গোষ্ঠি। আমার দেশ কখনও কোনদিন এইসব প্রতিষ্ঠানের মান্যতা দেয়নি। আর দেওয়ার প্রশ্নও ওঠেনা কোন ভাবেই। কঠোর হাতে এদের দমনে যারপরনাই তৎপর। এতসব প্রচেষ্টার মধ্যেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি এইসব জঙ্গি ক্রিয়াকলাপ। শান্তিপ্রিয় ভারতবাসীকে এইসব জঙ্গি গোষ্ঠীর বর্বরতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। রক্তগঙ্গায় বয়ে যাচ্ছে নীরিহ প্রাণ। 

সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যে বড়ো জঙ্গিদের একটা গোষ্ঠীর নির্মম হামলায় নিহতের সংখ্যা অন্তত সত্তরের কাছাকাছি। যাদের একটা বড় অংশ মহিলা এবং শিশু। সন্ধ্যা নাগাদ তাদের বস্তিতে হামলা চালিয়ে এনডিএফবি (সংবিজিৎ)গোষ্ঠীর জঙ্গিরা আদিবাসী শ্রমিক পরিবারগুলোর নারী-শিশু-পুরুষদের বাড়ি থেকে বের করে আনে, তারপর সার বেঁধে দাঁড় করিয়ে তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। এই নির্বিচারে চালানো নারকীয় হত্যাযজ্ঞে একটি বারের জন্যেও হাত কাঁপেনি এই নৃশংস মানুষগুলোর। এরা কোন সভ্যতায় বড় হয়েছে? জঙ্গলের হিংস্র পশুগুলোর চাইতেও এরা নিষ্ঠুর। 

আসামে আক্রান্ত গ্রামগুলো পরিদর্শন করার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং অবশ্য জানিয়েছেন সামরিক পথেই সরকার এই জঙ্গিদের মোকাবিলা করবে। মিঃ সিং বলেন, প্রাথমিক তদন্তে এটা পরিষ্কার এটা নিছক একটা জঙ্গি তৎপরতা নয় বরং এ হল পরিষ্কার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। ফলে সন্ত্রাসবাদীদের যেরকম জবাব প্রাপ্য সরকার তেমনই জবাব দেবে।"  

রাজ্যে অবশ্য ইতিমধ্যেই পাল্টা প্রতিবাদ শুরু হয়ে গেছে আদিবাসীদের পাল্টা হামলায় দুজন বোড়ো মারা গেছেন, প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলি চালনাতেও প্রাণ হারিয়েছেন আরও তিনজন। এই মারণমুখী ধ্বংসলীলা শান্তি ভূমিতে কেন ঘটছে

আরেকটি ভয়াবহ জঙ্গি কর্মকাণ্ড ঘটে গেছে আমাদেরই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে। গত ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তানের পেশোয়ারে সেনাবাহিনী পরিচালিত স্কুলে পাকিস্তানি তালেবানদের হামলায় ১৪০ জনেরও বেশি শিশু নিহত হয়। সাম্প্রতিক বিশ্বে ঘটে যাওয়া ন্যক্কারজনক ঘটনার নিরিখে এর সামনাসামনি হতে পারবে না আর কোন ঘটনা। 

পাকিস্তান রাষ্ট্রটি গঠিত হয়েছে ধর্মীয় জাতীয়তা বোধকে ভিত্তি করে। অবশ্য পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সেক্যুলার মহল ক্ষমতাসীন থাকলেও তারা নানাভাবে বিভিন্ন কারণে ও বিভিন্ন উপায়ে টিকে থাকার নিমিত্তে ধর্মীয় লেবাস শুধু পরিধানই করেনি এরসাথে তারা সময় অসময়ে সমর্থন, সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ইসলামী চরমপন্থিদের! আর এটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তানের জন্য। শুধু তাই নয় পাকিস্তানের এখন টিকে থাকার প্রশ্ন এসে গেছে! এই দেশ এত দিনেও বুঝতে শিখল না জঙ্গিদের মদত দানে কোন দেশের পক্ষেই মঙ্গল হতে পারেনা। দুধকলা দিয়ে কালসাপ পুষে এখন এদেরই হাতে দংশিত হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

 জঙ্গিরা নিঃসন্দেহে বিশ্ব মানবতার শত্রু, প্রতিটি মানুষের শত্রু। যেকোনো সদর্থক সৃষ্টিশীল ভাবনাই যেন এদের হত্যার তালিকার মধ্যে পড়ে। আফিগানিস্থান জঙ্গিদের আঁতুড় ঘর হলেও একে লালিত পালিতে করেছে পাকিস্তান। আজ সেই জঙ্গিরা ফ্রাঙ্কেস্টাইন হয়ে খোদ পাকিস্তানকে গ্রাস করছে। শুধু তাই নয় আফগানিস্তান পাকিস্তান পেরিয়ে জঙ্গিদের প্রজনন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, নাইজেরিয়া, সোমালিয়াসহ আফ্রিকা, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব দেশগুলো তো যেন এখন জ্বলন্ত কড়াই। 

সুশাসন আর কঠোর পর্যবেক্ষণ এর মধ্যে জন প্রতিনিধিত্ব সরকার ব্যবস্থা গড়ে ওঠালে, মানুষের মধ্যে সুশিক্ষার বীজবপন করলে জঙ্গিবাদ বিস্তারের পথ সংকীর্ণ হয়ে আসে। এই বিস্তারকে বাড়তে না দিয়ে শুরুতেই সমূলে উৎখাত করতে পারলে দেশের মঙ্গল। জাতির মঙ্গল। 

এবারে শান্তির জন্যে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছে ভারত এবং পাকিস্তানের দুইজন যৌথভাবে। এটি শ্রেষ্ঠ সম্মান। এর কথা মাথায় রেখেই দুই দেশ যৌথভাবে এগিয়ে আসুক। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোক জঙ্গি গোষ্ঠী আর তার ক্রিয়াকলাপ ধ্বংস করার জন্যে। মানুষের স্বার্থপরতা, নীতি হীনতা, পৈশাচিক মনোভাবের আবর্জনা দূর করার কথা ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র। এই দায়বদ্ধতা জনগণের। সরকারের। 

 সামনেই আসছে একটা নতুন বছর। সাদরে অভ্যর্থনা জানাই আমরা C/O সাহিত্যের সবাই মিলে। নতুন বছর আপনাদের সবার খুব ভাল কাটুক। এক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভারতের স্বপ্ন দেখতে ক্ষতি কি?

                                             পবিত্র আচার্য্য
                                             ১১ই পৌষ,১৪২১


কবিতাঃ রবের আকাশ // বারীন ঘোষাল


                                                                 
বিজনের কলকন্ঠ শুনতে চেয়ে ফোন করি তোমাকে
তুমি কল খুলে দাও
                 নদী
                      জল নেই
                                রঙ
#
রব-এর আকাশ
                 আকাশের রবে
ঢেউ দোল দোল ফিরে যায়
পুরো মাস্তুল
             আধো স্তন
অপলম চপলম প্রজাপতি আর থামে না
#
তার দুপাতা পাখার কোনটা আয়না
                                  না মালুউউম
#
এই পরীর সোনা যে কোথায় খোয়া যায়

এখন এই জাদুয়ানাটায় হাড় পরাবে কে ছোঁয়াবে

কবিতাঃ চেয়ার মোছো // প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায়



পাগল হওয়ার মতন করে
পালিয়ে যেতে চাইছি
হয়তো কাছেই রূপসা নদী
এবং তীরে বৈঠা
সাঁতরাবো কি ডুব দেব কি
ভাবতে ভাবতে গামছা
ফাঁকা কলসি বাজতে বাজতে
এগিয়ে গেলো সামনে।

অন্তত এই ল্যাজেগোবর
অবস্থাটা পাল্টাক
দাঁত ক্যালানো চতুর্মুখে
রাংতা রোদে ঝিল্‌কি
আজ বুনেছি কাল কাটবো
সুদআসলে মস্তি
কালি এলো কলম এলো
কাগজ শুধুই নুন চায়।

নুন না এলে গুণ না এলে
পান্তা ভাতে টাক্‌না
বারুদ মরা কাঠি কেবল
মধ্যরাতে ঠোকরায়
ছাই ফেলেছি কুলোও ভাঙা
কুলো মানেই চক্কর
বিষ ঝাড়বে এক পা পাজী
কাজির ঘরের আয়না।

বায়না করার আগে এবার
একটুখানি থমকে
পিছন ফিরে দেখলে পারো
বাঁশ কতোটা ঢুকলো
গড়গড়িয়ে ট্রেন আসবে
গলা যখন পাতলা
আপাতত মাচায় উঠে
চেয়ার মোছো খ্যামটা ।।


কবিতাঃ মিডিওকার // রঙ্গীত মিত্র

পুরোনোর কাছ থেকে নতুনের  শেয়াদা হাওড়া ;
কিন্তু কে দূরের ,কেই বা কাছের?
তবে কাল এক পুরুষ মেধা
আমাকে জানায়
মেয়েরা যতই শিক্ষিত হোক
তারা না কি সবাই সমান
আমি তবু সে কফির টেবিলে বসে ছিলাম
আমি বসেছিলাম কবিতা লেখার উদ্দেশ্য
যদিও তার চারপাশে মাছ ধরার খেলা
তারারাও আসে প্রদক্ষীণ করে চলে যায়
আমার ভিতরের বোধ এইভাবে এক মিডিওকারের জন্ম দেয়

কবিতাঃ কৃষি // রেহান কৌশিক

শতাব্দী প্রাচীন ঘুম মুছে ফেলে চেয়েছি জাগাতে
নিজের ভিতরে থাকা সব রং আলোর ফসল।
অন্ধকারে আর নয়, আলোশস্যে সাজাবো তোমাকে
ঠোঁটের কিনারে ঠিক জ্বেলে দেব রৌদ্রমাখা জল...

তাকাবে স্পষ্ট আবার? বাজাবে ঘুঙুর কাছে এসে?
আবির ওড়ানো দিনে ফিরে যাব পুরনো শহরে,
হারানো সুড়ঙ্গ খুঁড়ে তুলে আনব ধুলোগান আর
যে লাবণ্য নিভে গিয়ে ঘুমিয়েছে বিমর্ষ পাথরে!

মৌন দাঁড়াও এখানে। বুনে দেব তোমার ভিতর

আমার সমস্ত ভাষা, মুঠো ভর্তি সমস্ত অক্ষর... 

কবিতাঃ সুপ্রিয় মিত্রর দুটি কবিতা

খেয়ালী রাজার খাম / সুপ্রিয় মিত্র
*****************************
আঢাকা রাজত্ব
রাজ্যের সমস্ত নির্মাণ-নিদর্শন বর্তমানেনবীন ভঙ্গিল ছাদ !  
প্রজাদের বুকে বুকে সেই কবে হরিলুটের বাতাসার মতো
আছড়ে পড়েছে আকাশ আর তারা নেই, মাথার ওপর
পতপত করে ওড়ে অনন্ত মাদুর
#
আকাশেরা তো প্রাচীনতম আঠা
মায়েদের আঁচল অবধি লেগে থাকা
অন্ধকারের মেদুর গন্ধ ;
সে আঠায় জুড়ে , খামে পোরা ভেসে আসে
সীমান্তের হাওয়া রাজা দিক হারিয়ে ফেলতে থাকে
বেঁচে থাকা - বেঁচে ফিরে আসার ...   উদাস 'রে যায় ঘুমের ওপার
#
সকাল রাতের যে নিঃশব্দ পারাপার,-
চলায় চলায় শূন্য করে দেয় সমস্ত আহত ভরাট....
শত্রুর আক্রমণ কেঁদে ফিরে গেছে  এরইমাঝে
রাজার মা অতি সন্তর্পণে খাম খোলেন ,
অথচ আঠার চিড়বিড় শব্দে ডেকে ওঠে
ধ্রুপদী পাখি , সন্ন্যাসী মাছ , তপস্বী জলের ছলাৎ...
#
তারপর রাজা আর পড়ে না, কি লেখা আছে
চিঠির ভিতরে পড়েনা কোনো সভাসদ প্রজা পড়শী
ছাদের আশে পাশে জমে ওঠে    চিঠির পাহাড়


না পড়া শব্দ
শব্দের উচ্চারন
ততক্ষণে নিভিয়ে দিয়ে গেছে রাজ্যে ঘুমের যাতায়াত , আর 
এপারে ওপারের অভিশপ্ত মাঝে
বোবা নদী হয়ে বয়ে যান খেয়ালী রাজা ...

রাজ্যের মাতৃস্থানে নাব্যতা গভীর করে

ক্রমশ মিহি মিহি খামের ইতিহাস....




জনি জনি / সুপ্রিয় মিত্র
*****************************



ঠোঁটের কুলুপ দিয়ে হিংস্রতা ঢেকেছিলে কিনা,
চুম্বন নয়, তুমি উজ্জ্বল সপ্রতিভ দাঁত লোকানোয় ব্যবহার করো!
শ্রদ্ধায় মাথা নত করা , সে তো ছোটলোকের স্বভাব
আমরা শিখেছি আর শিখিয়েও নেব-
জনির আঙুলে কতখানি নখ রাখা উচিত
কত ডিগ্রীর আনত চোখ খুঁজে নিতে পারে স্তনের বাচালতা
কন্যে কেন শাড়ি পরতে শেখেনি, হায়! হায়!
বলো হরিবোল! দাঁতের কারুকাজ
মাংস টেনে ছিঁড়ে নিতে পারি
আমাদের গায়ে মানুষের রক্ত বইছে তাজা
আমরা ব্রাশ করে ঘুমোতে শিখেছি
ঘুমকে ছেড়েছি ব্রাশ করে
আমাদের হাসি হতে হবে নিখুঁত
আমাদের খেতে শেখা মুখ খানি একটুকু ফাঁক করে
ঠিক বলেছ কাকু , আমরা চুমু খাব কেন?
জনি তোমার বাপ তুখড় চালাক
অট্টহাস্যে জানা ছিল প্রকাশ্য হবে চিনির সুঘ্রাণ !
জনি তুমি পোগো দ্যাখো... তোমার বাপ-মা হলিউড দেখে
স্বপ্ন দেখতে শিখেছে - রাতের বিছানা তামাম নিউইয়র্ক
প্রেমেরযুগলবন্দী ইতস্তঃত হাঁটাচলা
কদমে কদমে ঠোঁটের বিনিময়...
অথচ তোমার মা-বাপ সকাল হলেই ছিটকে যাচ্ছে কেন?
                      #
প্রচণ্ড সকাল। জনি এখন পোগো দেখছে। ছিটকে যাওয়া দেখছে।
লুকিয়ে পাশের চ্যানেলে দেখছে- ধর্ষণের খবর~
ধর্ষক - ধর্ষিতা উভয়েরই মুখ ঢাকা। ওরাও ছিটকে গেছে বুঝি!
#
জনি বড় হল!
জনি, চুমু খেয়ে ফিরিয়াছে বাড়ি
জনি'র দাঁতের ফাঁকে চুমুর মাংস লেগে নেই...
জনির গার্জেন মুখ হাতড়ে কিচ্ছু খুঁজে পাচ্ছেনা
একান্ত বোকাবাক্সও জানে - তখন
শহর জুড়ে চুমুর ব্যারিকেড।
জনির পিতা মাতা নিউইয়র্কের রাস্তা চিনতে পারছেনা ।
চেনা রাস্তা গুলিয়ে ফেলছে বারেবার!
জনির গার্জেন জনিকে আর চিনতে পারছেনা...
#
জনি আর কেউ নয়...
জনি সেই রাস্তা, যেখানে দাঁড়িয়ে কিছুজন
এই কবিতা পড়ছে ...
কেউ বলছে- বাহ! আমাদের বোকামিকে পেরিয়ে এসেছে মানুষ
কেউ ভাবছে- জনির বাপের চালাকি নিয়ে
আর কোনো ছড়া কবিতা লেখা হচ্ছেনা কেন...!









কবিতাঃ যোগ লেখাযোগ যোগাযোগ // সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

কতটা লেখাযোগ থাকলে 
একটা কবিতা নিজের হয়ে ওঠে! 
আমি প্রতিবার কবিতার আঁচল ছুঁয়ে দেখি দেখি 
প্রতিটা কবিতার মধ্যেই একটা গল্প লুকিয়ে থাকে 
ফিরে আসার গল্প 
ফিরে যাওয়ার গল্প। 
যারা ফিরে আসে হাতে হাত রেখে 
তাদের সাথে কবিতা রাত্রি যাপন করে 
গন্ধে স্পর্শে পাতায় পাতায় রেখে যায় বিনিদ্র রাত্রির ছাপ 
কবিতার সাথে কবিতারাও আসে, কবিও আসেন 
এতদ্বারা পান্ডুলিপির সৎকার হয়। 
পাতা উল্টে ফিরে যাওয়ার গল্পে চোখ পড়ে আমার 
সমস্ত বন্ধ করা মুখ আর কলমের মাপ নি 
এ কলমের কালি তো ছিল 
এ চোখের দোয়াত তো শেষ হয়নি 
তবে কি ছাপ রাখা কাগজের মালিক বদলে গিয়েছে 
নাকি কাগজের মালিক ফিরে আসা কেউ! 
কবিতা আমার চোখে চোখ রাখে 
মৃত কান্নায় জানিয়ে দেয় 
প্রতিটা কবিতার মধ্যেই একটা গল্প লুকিয়ে আছে 
সে গল্পে আমি যোগাযোগ বিহীন ব্যর্থ প্রেমিক। 


কবিতাঃ হত্যাকুম্ভ // ঋক সৌরক


এক শুভসন্ধ্যায় তার অপমৃত্যু ঘটল

তারপর অপচয়ী সোহাগস্তব
বিধুর জলজ লিফাফা
অসংনম শৈশব অনুবিক্ষত
কুঁজ থেকে উবে যায়
ইতিহাস
পেরিয়েছি কতো শীতল স্পর্ধা
যুদ্ধের নীল-লাল পার্শ্বরেখা
ফোটালো মিথ্যে চাঁদ অপুষ্পা
স্পর্শমূহ্য ছুতমার্গ

স্ক্লেরায় বিষের স্তর – তীক্ষ্ণ আবেশ
লেট মি টেস্ট ইওর ক্রাই
কোলকাতা নাভি ওঠে পচা গন্ধে
মরে যাও এবং মরতে দাও

শুভসন্ধ্যায় কুপিয়েছি দুর্বলতা
তারপর শব্দপরাগ
শব্দপরাগ ডিজিট্যাল

এক বিশেষ পৃষ্ঠায় আটকে গেছি আজন্ম ...

কবিতাঃ সূর্যাস্তের দিকে তাকিয়ে আছো অলৌকিক // সজল দাস

#
মুখের ওপর শুনশান
যে নৌকো পড়ে আছে, তার দিগন্তে
একটা চিল উড়ে গেল
#
এত সূক্ষ্ম ফোঁটা, যে
ছাতা ধরতে পারছি না
#
অথবা
#
এতই সূক্ষ্ম ছাতা, মনে হয়
ভিজবো বলেই দাঁড়িয়ে আছি, কতকাল...

কবিতাঃ শীত এসেছে ডিসেম্বরে //দেবায়ন ভট্টাচার্য



হালকা আলোয় রাস্তা ঘেরা
এদিক ওদিক চাদর গায়ে
ত্রস্ত শহর পারদ মাপে
শীত কি এল ডিসেম্বরে ?

গরম তোমার শরীর ঢাকে
নরম বালিশ -লেপ বিছানায়
শীত তো ভীষণ অলপ্পেয়ে
যতক্ষণ আর থমকে দাঁড়ায়

ফুটপাথে যে লোকটি শুয়ে
তার কাছে শীত শীতলতম
তোমার নিখাদ আনন্দ হয়
অফিস পাড়ায়  ছুটির চমক

ঘর ভেঙ্গে ঘর উঠবে ভেবে
কেউ স্বদেশেই ভিন্নগ্রহে
কেউ পাশবিক আনন্দ পায়
শীত সাজানো নিথর দেহে

চোখ থেকে চোখ পূর্ণ গ্রহণ
ধীর ব্যবধান এগিয়ে চলায়
নিন্দুকেরা যে যাই বলুক
শীত কে দারুণ  আগুন মানায়

আমার এসব  বন্য লাগে
আমরা খুঁজি সঙ্গী সাথী
শীত এসেছে ডিসেম্বরে
শীত মানে তো চড়ুইভাতি !







কবিতাঃপট পরিবর্তন // বেনামী



#
সময় বয়ে গেলে কালো জোৎস্নার রঙ আরও গাঢ় হয়,
স্লিপারে উপুর হয়ে থাকা বেদনার ওপর বাড়ে  
কেবলই গতিময় আনাগোনা, 
অবশেষে শরীরী ছদ্মবেশে বেঁচে থাকা !

#
বহুদূরে একটা শস্যমুগ্ধ মাঠ
তবু ক্ষুধার্ত শিশু পৌষের আগুন জ্বালায়...
বাসে করে চলে অশান্ত কবর নিয়ে।

#
চেতনা অতিক্রম করে যায় ভবিষ্যৎকে
সময় জেগে থাকে,
পট পরিবর্তন হয়,
মানুষ সময় কেনে, সময় বেঁচে দেয় !!



-----------------------o---o---o-----------------------   

কবিতাঃ ধাপ্পা //সেলিম উদ্দিন মণ্ডল

আমি সিস্টেমের ভিতর থেকে বেরোতে পারিনা। আমার অসুস্থতা, আমার মন খারাপ,সব শবের সমাধিস্থ ।আমার বিহ্বলতার নাম দিয়েছি 'মন কেমনের রাস্তা'এই রাস্তায় গলি নেই।আলো নেই।অন্ধকার নেই।ফুটপাত ধরে শুধুই হেঁটে চলা।সামনে ছায়া, পিছনে ছায়া আর ভিতরে যুগ যুগ বেঁচে থাকার মায়া।এই বেঁচে থাকার নাম দিয়েছি 'আত্মহনের চৌরাস্তা'চৌরাস্তায় আমার প্রেমিকারা থাকে।আমার বন্ধুরা থাকে।আমি দেখতে পাই না।তবে পিছন থেকে মাঝেমাঝে কারা যেন বলে 'ধাপ্পা','ধাপা'

কবিতাঃ ঔদার্য // তন্ময় ভট্টাচার্য্য



ঝিমিয়ে পড়েও আঙুলের ফাঁকে ফুল রেখে এসেছি
এখন ওদের সময় হয়েছে নিশাচর হয়ে ডানা মেলবার
আসলে আলোয় সবাই সহজ নয়

যেহেতু মানুষ এখনো মরেনি
প্রয়োজন হাত উপুড় করেছে হাওয়ার এবং নীচের জলজ বিশ্রামে

চোখ বুজে আমি তাকিয়ে রয়েছি ওর দিকে
ইচ্ছে করেই রাস্তা হারিয়ে যে ভাবে,কিছুটা দেখেও দেখিনি
শুনেও শুনিনি মনান্তরের হেডফোনে


ঘুমোচ্ছি আর তাল মেলাচ্ছি একসাথেই

কবিতাঃ তুমি যাবার পরে... // সেখ সাহেবুল হক

যে চোখ ছিলো ডাহুকের,উরুতে মেহগিনির ঘ্রান
তাকে বুকে আঁকড়ায় ধারের খাতা– যদি সাংবিধানিক ভুল চোখে পড়ে।
হাতের লাল সুতোয় ছিলাম যতটুকু আমি, তাতে কাঁটাতার বিছিয়েছে ধর্মপ্রাণ
পেনসিল ডগায় প্রেম আত্মঘাতী থলি...
ডিএনএর প্যাঁচে নিষিদ্ধ আখ্যানমঞ্জুরি মুখোমুখি জেনেটিক্স ক্লাস
ভালোবাসার সিক্ত আঁশ – হাতে মেখে বসেছিলো বিকেল।
আছে আবছা ময়দান, জবজবে বিধর্মী ঘাম।
অনিচ্ছার রুমাল ফেলে আর ফেরোনি...  

প্রত্যেক পাঁচিলের গায়ে সম্প্রীতির নীরব বিজ্ঞাপন সাঁটি
আমার ধারের খাতা লিখেছে –

ভিখারি আর প্রেমিকের চাহিদা আলাদা বলে মানুষ ভালোবাসে।

খোঁজখবরঃ স্প্যাস্টিক রিভিউ / সু্প্রিয় মিত্র


                 প্রত্যেকটি হৃদয়ঘটিত  অনুভূতির রুমাল কোনো না কোনোভাবে যুক্ত। কিন্তু আজ লিখতে বসে ব্যতিক্রম সুধীজন ! কারন স্প্যাস্টিকের বোতাম সংখ্যা পড়বার আগে তাদের প্রথম সংখ্যা 'রুমাল' না পড়ুন, চোখ না বোলালে , স্প্যাস্টিকের অন্দর কি বাত , বোতাম এর দূর্গ পেরিয়ে দেখা দেবেক নাই। শুধু এই সাহিত্য-কলা পা-গলা নমুনা মিলিবে উল্কার সম্পাদকীয় তে - 'একটার পর একটা নাম হিজিবিজি দিয়ে গোল করে কাটতে কাটতে  পেয়ে গেলাম...' তারপরের টা এই মুহুর্তে ইতিহাস, যা কাগজের পরতে পরতে প্রমাণ করে -
'স্প্যাস্টিক' কোনো মানসিক বন্ধ্যান্ত্ব নয়, এবং তার ভিন্ন ভিন্ন ছাপ প্রকট বা প্রচ্ছন্ন ভাবেই নিজস্ব।

এ তো গেল ভূমিকা রীতিনীতি। এবার আসি কঙ্কালে। যাদের ছাড়া এই পত্রিকার দেহ টাই হতো না। তা হল - বোতাম নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে কক্ষনো বা দুঃখ ছিনিয়ে , সাহিত্যকর্ম। আমার কোনো বদ অভ্যাস নেই পাঠবিষয়ক, তাই প্রথম পাতা থেকেই কবতের সাথে দেখা। কখনো কারোর লেখা পড়ে একটা পৃষ্ঠা তেই আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছি ঘন্টা ধরে, কোনো কবিতায় বা এক দুটো লাইন দাগ কেটে গভীর থেকে গভীরে, আবার কিছু কবিতা পড়ে একটা কথা বাজারের দিকে ছুটে যাচ্ছে , যেখানে - বোনলেস মাটন এর কোনো দাম নেই, তাহা যথার্থ ছিবড়া মনে হয়... তেমনই যাপন লেস কবিতা হল আমার কাছে তেমনই।
কচি রেজা, শান্তনু মিশ্র, তন্ময় ভট্টাচার্য্য, সুবীর সরকার, রাজেশ্বরী ষড়ঙ্গী - এনাদের লেখা আমায় বারবার পড়িয়ে নিয়েছে, ভাবিয়েছে,ভাবিয়ে অবশ করে রেখেছে।
আবার কিছু বাক্য বা কখনো কিছু শব্দবন্ধ আমায় ভয়ঙ্কর আছন্ন করে রেখেছে, যেমন রাজর্ষী মজুমদারের-
'এ শহরে এখন বারিষ।' , রঙ্গীত মিত্রর- ;আমি তো কিছুই বলতে পারিনা... কারন বোতামগুলো ঠিকঠাক লাগাতেই পারিনি।', শান্তনু মিশ্রের - বোতামের মতো ঝুলে আছে মৌলিক সংযম, গৌরব চক্রবর্তীর 'পথিক' কবিতার চতুর্থ লাইন। লাইন উদ্ধৃতি দিলাম না কারন পুরো কবিরা না পড়ে এই লাইন এর সুবাস আসেনা, আর বলতে হয়, লাইন ড়া বাদ দিয়ে কবিতায় আবার আমি আর কিছুই পাইনি। এ কিরকম মায়া কে জানে।

এরপর এসে পড়লাম প্রবন্ধ গদ্য গল্পে- লাইন ধরে বলাটা বোকামি, কিন্তু শুরুতেই যেটা পড়ে চমকে গেছি, তা গল - অত্রি ভট্টাচার্য্যের বোতাম সিনেমাবিষয়ক। প্রচুর জানার সাথে , শেখারও রাস্তা লিখে দিয়েছে অত্রি দা। তুষ্টি ভট্টাচার্য্যের 'বোতামের অন্দর কি বাত',আর অনির্বান বটব্যালের 'নিঃশব্দের বোতামিয়ানা, পায়েল নন্দীর 'বিশেষত বোতাম' কে আমি সাধুবাদ জানাই। দারুন লেখার গতি, স্বচ্ছতা আর লেখার ইউ টার্ন গুলো। সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ভাসমান বোতামের দিন'- নামে এক্কেরে সফল। আহা পরন্তাপ! ভালোলাগা জাগে। ভালোবাসাও। ও=এরপর ধামাকা হচ্ছে- উল্কা দি আর ঋষি সৌরকের যৌথকর্ম কল্পবিজ্ঞান - আন বাটনড্‌ । কিছু বলার নয়। শুধু পড়তে হবে বস্‌। আমি কিছুই বলব না। আর যার গল্প আমায় আপাদমস্তক ছুঁইয়ে গেল- তিনি হলেন অভীক দত্ত ও তাঁর লেখা- কে কাহার। অভিভূত হলাম।

আর যার লেখায় আমার ক্রমশ চোখ হারাচ্ছে, সে হল- বিবেক ভট্টাচার্য্য। খুব বেশীদিন হয়নি লিখছে, কিন্তু গল্পে ও যে আরো পারঙ্গম হয়ে উঠবে। এ আমার একান্ত উচ্চাশা। 'একটি আষাড়ে প্রেম' তারই কথা বলছে। ওকে আরও লিখে যেতে হবে।


এরপর এসে ভালোলাগা জমাট বাঁধে রোশনি কুহু চক্রবর্তীর লেখা নাটক - বোতাম এ। নাটক বটে তবে এই বিষয়ে নাটকীয়তা একটু কমানো যেত মনে হয়েছে। তবুও, তা গ্রহণ করা যায়। ভালো লাগা পাতা ওল্টানোর অনেকক্ষণ পরেও থেকে গেছে। 



এরপর এসে পৌঁছলাম- ইন্দ্রনীল তেওয়ারীর 'সম্পাদক কে চিঠি'এদিকে পাতা শেষ হয়ে আসার দুঃখু নিয়ে পড়া শুরু করলাম এবং যা পড়লাম জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না। আফসোস হল না, কারন শেষ টা যদি এরকম লেখা দিয়ে হয়, তাহলে আর কষ্ট হয় না সমাপ্তির। কারন, ভাবনা থেমে নেই।

তবে এই পত্রিকা অন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে অমিত বিশ্বাসের আঁকা – GANDHAREE THE MOTHER OF HUNDRED SONS । পাঠকের কাছে এই ছবি একটা আলাদা পাওনা। অমিত দা কে সাধুবাদ জানাই।
আর এই ভাবনার নাও এ বইতে বইতেই কখন দেখলাম রুমাল থেকে বেড়াল এর মতো পত্রিকা নয়, এই পৃষ্ঠাগুচ্ছ একটা বই হয়ে গেছে। হ্যাঁ এটা বই। ভবিষ্যতে বোতামের কি হবে কে জানে। কিন্তু এই বর্তমানের অতীত নিয়ে রিসার্চ হলে, স্প্যাস্টিকের 'বোতাম' সংখ্যা অন্যতম একটা নিদর্শন হয়ে উঠবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
ভুলচুক ,খামতি তো থাকবেই , যেমন- প্রিন্টিং এ কিছু গলদ যার জন্যে পাঠকের কাছে কবিতা বা গদ্যের মানে সূর্যপ্রণাম থেকে শীর্ষাসন হয়ে যাওয়ার প্রভূত উপায় খোলা। লেখা নির্বাচনে আরও কঠোর হওয়া খুবই দরকার ছিল কিছু ক্ষেত্রে। কারন একটা কথা আবার বলতে ইচ্ছে করে- বাজারে বোন লেস মাটন চলেনা বস্‌! তবে এসব ভুল সম্পাদক সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারে, নয়তো পরবর্তী সংখ্যার তাগিদ কমে যায়, আত্মতুষ্টি তে। এবার আপনাদের প্রশ্ন উঠতেই পারে- পরের সংখ্যার বিষয় তবে কি?
আমি বলব - এই তো ঠিক ধরেছেন। কী। ঠাট্টা করছি বলছেন।উঁহু, ইতিমধ্যেই আমায় উল্কা দি জানালো নেক্সট আসছে- চাবি !
পাঠকগণ ঘরের চাবি না ভেঙে এবার তালার কথা ভাবুন। চাবি আসছে ...
 
CSS Drop Down Menu
আমাদের লেখা পাঠান careofsahitya@gmail.com- এ মেল করে।