আমাদের লেখা পাঠান careofsahitya@gmail.com-এ। ভালো থাকুন সকলে। চলতে থাকুক কলম। বলতে থাকুক শব্দ।

প্রচ্ছদ

A SAHITYA-ADDA Initiative C/O:sahitya A BLOG MAGAZIN STAY WITH US THANK YOU
bloggerblogger

শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

গল্পঃ জয় বিজয় // ধীমান বসাক



                


                   ৯৭১ সালের ৭ই নভেম্বর : মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আবুল কাশেম আর আমি টাঙ্গাইল সেক্টরে অপারেশন চালাচ্ছি টাঙ্গাইল সদরের কাছে মীরের বেতকায় আমাদের ঘাঁটি পাকসেনারা বুঝতে পেরেছে পরাজয় আসন্ন ওরা নির্বিচারে গনহত্যা চালাচ্ছে আমাদের টাঙ্গাইল সেক্টরের এরিয়া কমান্ডার কাদের সিদ্দিকীর অধীনে গ্রুপ লিডার কাশেমের নেতৃত্বে আমি অপারেশন চালাই আমাদের উপড় নির্দেশ এলো ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে ভাতকুড়ার কাছে বড়পুল উড়িয়ে দিতে হবে আরেক দলের কাছে নির্দেশ গেল বাংড়া গ্রামের কাছে  পুংলির পুল উড়িয়ে দিতে হবে যার ফলে ঢাকা থেকে সরাসরি বা ময়মনসিংহ হয়ে টাঙ্গাইল সদরে কোন সামরিক সাহায্য না ঢুকতে পারে বাংড়া গ্রামের কাছে পুংলির পুল ওড়ানোর দায়িত্ব পড়ে মেজর বাতেনের কাঁধে তারা কাজ ভালভাবেই সমাধা করেণ আমরা রাত বারোটার সময় অপারেশন স্থলের দিকে রওনা হতেই একদল পাকসেনার মুখে পরে যাই ক্রশ ফায়ারিঙ্গে আমাদের দলের দশজনের ভিতরে আটজনই মারা যায়   প্রায় তিরিশ জন পাকসেনাও খতম হয়  কিন্তু অচিরেই গাড়ী ভর্তি করে পাকসেনা চলে আসে আমরা দুজন পালিয়ে ভাতকুড়া গ্রামে আশ্রয় নেই

               পাকসেনারা ক্ষ্যাপা কুত্তার মত আমাদের খুঁজতে থাকে আমরা ভাতকুড়া গ্রামের হরিদাস বসাকের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছিলাম বাড়ীটি ছিল পরিত্যক্ত কারণ হরিদাস বসাক পালিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন পরদিন ভোরে আমরা হাতিলা গ্রামে হজরতের বাড়ীতে আশ্রয় নিই রাজাকার আলবদর বাহিনীর সাহায্যে পরদিন পাকসেনা এসে হরিদাস বসাকের বাড়ী পুড়িয়ে দেয় তারপর ভাতকুড়া গ্রামের দশ থেকে আটত্রিশ বছর বয়সী পুরুষদের ধরে নিয়ে গিয়ে লাল লোহার পুলের নীচে হাত পা বেঁধে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে আর দশ থেকে পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সী নারীদের প্রথমে খানসেনা , পরে রাজাকার আলবদর-রা ধর্ষন করে

                                   আমরা পরদিন রাতে বড়পুলের নীচে ডিনামইট ফিট করে ওটি উড়িয়ে দিই তারপর টাঙ্গাইল শহরে প্যাড়াডাইস পাড়ায় গোপেশ্বর বসাকের বাড়ীতে আস্তানা গাড়ি গোপেশ্বর বসাকও স্বজন বান্ধব সহ ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন     কিন্তু খান সেনাদের খোঁচর ( রাজাকার/আলবদর ) তক্কে তক্কে ছিল রাতে প্যাড়াডাইস পাড়া রেইড করলো ওরা তখন মরিয়া ঢাকা থেকে সাহায্য আসা বন্ধ রসদও ফুরিয়ে আসছে নির্বিচারে ওরা  গনহত্যা চালাচ্ছে টাঙ্গাইল শহরের প্রায় অর্দ্ধেক লোককে ওরা মেরে ফেলেছে আমাদের কাছে পটাসিয়াম সায়ানাইড ছিল নির্দেশ ছিল কোনভাবেই ধরা পড়লে চলবে না

                       গ্রুপ লিডার কাশেম বললেন মরতে হবেই কিন্তু এমনি মরবো না শোন আমি পটাশিয়াম সায়ানাইড খাচ্ছি মরার পরে তুমি আমাকে কেটে রান্না করবে তারপর সব সায়ানাইড ওতে ঢেলে দেবে অনেকদিন পরে মাংস খাওয়ার আনন্দে ওরা তেঁতো স্বাদ টেরই পাবে না রান্না শেষ করে তুমি পায়খানার পিছনে লুকিয়ে পড়বে খাওয়ার আগে ওরা অন্যকিছু ভাববে না বা কারো খোঁজ করবেনা সব খানসেনা সাবাড় হওয়ার পর তুমি পাশের লৌহজঙ্গ নদী সাঁতরে ওপাড়ে যাবে সেখানে মেজর বাতেন আছেন , তাকে সব খুলে বলবে আমি প্রতিবাদ করতেই উনি বললেন , এটা গ্রুপ লিডার হিসাবে আমার আদেশ একজন সৈনিক হিসাবে তোমাকে এটা মানতেই হবে

                                    উনার কথামতই কাজ  হলো মাংস খাওয়ার আনন্দে ওরা তেঁতো স্বাদ টেরও পেলোনা সবকটা (পঁচিশ জন ) পটাপট মরলো আমি লৌহজঙ্গ নদী সাঁতরে ওপারে গেলাম তারপর এক কিলোমিটার হাঁটার পরে বাসাখানপুরে মেজর বাতেনের লোকেরা আমাকে ধরে মেজরের কাছে নিয়ে গেল মেজর সব শুনে উল্লসিত হয়ে এরিয়া কমান্ডার কাদের সিদ্দিকীর সাথে যোগাযোগ করলেন স্থির তিনদিন পরেই টাঙ্গাইল দখল করতে হবে তিনদিন পরে শুরু অপারেশন জয় বিজয় আমরা বিজয় পেলাম  কিন্তু শেষ মুহুর্তে একটি গুলি এসে লাগলো আমার পাঁজরে বাঁচার কোন আশাই ছিল না তবু বেঁচে গেলাম বিজয় দেখবো বলে তারপর ষোলই ডিসেম্বর রচিত ইতিহাস জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশের

                             এতকথা বলতে গিয়ে বৃদ্ধ হাঁপিয়ে গেলেন কলকাতার জি.ডি.হসপিটালে আমার পাশের বেডেই ছিলেন উনি আমার সাথে পরিচয়ের পর  যখন ককক আমাদের পিতৃপুরুষের বাড়ী ছিল টাঙ্গাইলের ভাতকুড়া গ্রামে তখন তিনি আমাকে এই কাহনী শোনান আমি একটু আধটু লিখে থাকি জেনে আমাকে অনুরোধ  করেণ আমি যেন  তার নাম না জানাই তাই নাম  লিখলাম না

                             আমি তাকে বলেছিলাম এতকিছু করে কি সুখ পেলেন ? উনি  বলেছিলেন শোন হে ছোকরা , “১৯৭১ আমার বয়স ছিল  ২৭ বছর অর্থাৎ আমার বর্তমান বয়স     ৭০ বছর   আমি  কোনদিন নিজের সুখ  চাইনি আমাদের মত লাখো শহীদের আত্মত্যাগের ফলে স্বাধীনতা এসেছে স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নতি দেখে সবাই ঈর্ষাণ্বিত রাস্তাঘাট এখন বিশ্বমানের কলকাতার মত এবরো খেবরো নয় টাঙ্গাইল এখন উন্নত জেলা ঢাকা শহর দেখলে তাক লেগে যাবে তোমাদের পিতৃ-মাতৃকুলের বাসভূমি ভাতকুড়া গ্রাম আর অজ  পাড়াগাঁ নেই সেখানে রাস্তা হয়েছে , ঘরে ঘরে বিদ্যুত এসেছে অটো রিক্সা চলে একবার গিয়ে দেখে এসো উন্নতি কাকে  বলে
                জয় চেয়েছিলাম , বিজয়ী আমি আজ,  ক্ষুদ্রসুখে ভরে না মুক্তিযোদ্ধার ক্ষুধা ,দীপ্ত জ্বালা অগ্নি ঢালা সুধা বলেই তিনি চোখ বুজলেন পরদিন ভোরে  উনি  মারা  যান মৃত্যুর  পরেও  তার  মুখে লেগেছিল বিজয়ের প্রশান্তি  ।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

CSS Drop Down Menu
আমাদের লেখা পাঠান careofsahitya@gmail.com- এ মেল করে।