আমাদের লেখা পাঠান careofsahitya@gmail.com-এ। ভালো থাকুন সকলে। চলতে থাকুক কলম। বলতে থাকুক শব্দ।

প্রচ্ছদ

A SAHITYA-ADDA Initiative C/O:sahitya A BLOG MAGAZIN STAY WITH US THANK YOU
bloggerblogger

শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

প্রবন্ধঃ বিবর্তন (ইংরাজী কাব্য ও তাঁর বহতা ধারা) // সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়

               সাহিত্য হল পৃথিবীর ভেতর একটা পৃথিবীর মত যা বাস্তবিক পৃথিবীর থেকেও কয়েকগুণ বড়ো, বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং গভীর। যারা প্রকৃত সাহিত্যপ্রেমী তারা কোনোকালেই ভাষার গন্ডিতে আবদ্ধ থাকতে পারেনি, পারবেও না। সেই কারণে বরাবরই বাঙালী সাহিত্যানুরাগীরা বাংলার সাথে সাথে ইংরাজী সাহিত্যেরও আস্বাদ নিয়ে এসেছে। ইংরাজী সাহিত্য, বিশেষকরে ইংরাজী কাব্যের সাথে যারা ইতিমধ্যেই সুপরিচিত, আশা করি তারা বুঝবেন এই ভাষার কাব্যধারার আলোচনা কতটা বিশাল, বহুমুখী এবং কঠিন হতে পারে। তবুও দুঃসাহস করে একটা চেষ্টা করলাম।

             ইংরাজী কাব্যের নানান সূক্ষ্ম রীতিনীতি-ধারা ইত্যাদি আলোচনার জন্য প্রথমেই সময় ও বিবর্তনের ইতিহাসকে আটভাগে বিভক্ত করে নেওয়া যেতে পারে। যথাক্রমে- ১। প্রাচীন ইংরাজী যুগ, ২। মধ্য ইংরাজী যুগ এবং চসার, ৩। এলিজাবেথান যুগ এবং মিলটন, ৪। নিও-ক্লাসিকাল যুগ, ৫। রোমান্টিক যুগ, ৬। ভিক্টোরিয়ান যুগ, ৭। আধুনিক যুগ এবং ৮। আধুনিকোত্তর যুগ।

                সমালোচকেরা প্রাচীন ইংরাজী যুগ হিসেবে পঞ্চম শতাব্দী থেকে একাদশ শতাব্দীর মাঝের সময়টাকে ধরেছেন। অনেকেই মনে করেন, অষ্টম শতাব্দী থেকে এই যুগের সূত্রপাত হয়। এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। তবে যে লেখাগুলি পাওয়া গেছে, অনুমান করা হয় সেগুলো তারও প্রায় তিনশো বছর আগে লেখা হয়েছিল। ৪১০ খ্রিস্টাব্দে রোমানদের প্রস্থানের সাথে সাথেই ইংরাজী সাহিত্যে প্রাচীন যুগের ভিত গড়ে ওঠে এবং ১০৬৬ খ্রিস্টাব্দে নরম্যান্ডি বিজয়ের সাথে সাথেই তা সমাপ্ত হয়। এই বিশাল সময়সীমায় গদ্যের আগে রচিত হয়েছিল কাব্য। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কোনো লেখাতেই “ইংল্যান্ড” নামের উল্লেখ মেলেনি।

                 প্রাচীন ইংরাজী যুগে মূলত দু’ধরনের কাব্য দেখা যেত, ১। জার্মানিক বীরত্বের কাব্য যা মূলত পেগ্যান ধর্মের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এবং ২। পরবর্তী সময়ে খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারের জন্য লেখা কাব্য। সামান্য কিছু কবি (ক্যাডমন, ব্যেডে, অ্যালফ্রেড দ্য গ্রেট এবং সিনউল্ফ) ছাড়া কারোর নাম সেভাবে জানা যায়না। পেগ্যান কবিতার মধ্যে আমরা “উইডসিথ্”, “ওয়াল্ডেয়ার”, “দ্য ফাইট অ্যাট ফিন্সবার্গ” বা “দ্য ব্যাটল অফ ম্যাল্ডন” এর মত কবিতা দেখতে পাই। খ্রিস্টান কবিতার মধ্যে দেখতে পাই বাইবেলের নানা ঘটনা নিয়ে লেখা কবিতা (“জুলিয়ানা”, “এলিন”, “ক্রাইস্ট”, “দ্য ফেট্স অফ দ্য অ্যাপোস্টলস”, “ক্রাইস্ট অ্যান্ড স্যাটান” ইত্যাদি) যা সিনউল্ফ গ্রুপ এবং ক্যাডমন গ্রুপের কবিরা লিখেছিলেন। এছাড়াও ছিল দুঃখের কবিতা বা এলিজি। তবে এই যুগের শ্রেষ্ঠ অবদান ছিল “বেওউল্ফ”।

                   “বেওউল্ফ” একটি ক্লাসিক মহাকাব্য যা বর্তমানে “ইলিয়াড” এবং “ওডিসি’’র সাথে একই আসনে স্থান পেয়েছে। এর কবি সম্পর্কে আজও কিছু জানা যায়নি। এটির বিষয় জার্মানিক বীরগাথা যেখানে আমরা ইগথিউ-এর ছেলে বেওউল্ফকে জলপথে ডেনমার্ক আসতে দেখি এবং সেখানে ড্যানিশ রাজা হ্রদগারের রাজত্বকে তিনি দৈত্য গ্রেন্ডেল এবং তার মায়ের হাত থেকে মুক্ত করেন। বেওউল্ফ দেশে ফিরে যান এবং সেখানে গ্যেটাসের রাজা হয়ে চল্লিশ বছর রাজত্ব করেন। এক ড্রাগনকে হত্যা করার সময় গুরুতর চোট পেয়ে তিনি মারা যান। কাব্য শেষ হয় বেওউল্ফের সাম্মানিক সমাধিতে। রবার্ট জেমেকিস নির্দেশিত এবং রে উইনস্টন-অ্যান্থনি হপকিন্স-অ্যাঞ্জেলিনা জোলি অভিনীত ২০০৭ সালের কম্পিউটার অ্যানিমেটেড “Beowulfসিনেমাটা দেখে নিতে পারেন আগ্রহ থাকলে।

                  স্টাইল বা রীতি সম্পর্কে বলতে গেলে এইসময়ের কাব্যে ভাষার ব্যবহার ছিল বড্ড স্পষ্ট এবং শক্তিশালী। যৌগিক শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যেত। Simile বা উপমা অলঙ্কারের ব্যবহার প্রায় ছিলনা বললেই চলে। তবে Metaphor বা রূপক উপমা অলঙ্কারের শক্তিশালী প্রয়োগ হত। ছিল Alliteration বা অনুপ্রাস অলঙ্কারের ব্যাপক ব্যবহার। ল্যাটিন থেকে বহু ধার করা শব্দ মেলে এইসময়ের লেখায়। নর্দামব্রিয়ান, মার্সিয়ান, কেন্টিশ এবং ওয়েস্ট স্যাক্সন- এই চাররকম Dialect বা উপভাষার দেখা মিলতো প্রাচীন ইংরাজী যুগের সাহিত্যে। আজকের ইংরাজী ভাষার সাথে এর কোনো মিল ছিলনা

                       ব্যেডে’র লেখা অনুযায়ী “ক্যাডমন’স্ হিম্” ছিল এই যুগের সবচেয়ে পুরোনো কবিতা। গবেষকদের মতে, সম্ভবত এই যুগের শেষ কবিতা ছিল “দ্য গ্রেভ”। আজও এই যুগের লেখা কবিতা, গদ্য নিয়ে অনুরাগীদের আগ্রহের অন্ত নাই। ইতিহাসবিদদের নিরন্তর প্রয়াস চলছে এই যুগের আরো অনেক অনেক তথ্য অন্বেষণের। যতদিন পৃথিবীর অস্তিত্ব রয়েছে, ততদিন এই যুগ বেঁচে থাকবে এর সমৃদ্ধ সাহিত্যসৃষ্টির মাধ্যমে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

CSS Drop Down Menu
আমাদের লেখা পাঠান careofsahitya@gmail.com- এ মেল করে।